পলায়ন

—মোবায়দুল সাগর


টাউন হল মাঠে চলছে কবিতা উৎসব।
মঞ্চের সামনে হাজার মানুষের ভীড়।
তাদের মধ্যে আমিও একজন।
উপস্থাপক ঘোষনা করলেন—এবার কবিতা 
আবৃত্তি করতে আসছেন আমাদের কৃতী সন্তান...
নাম শুনতেই আমি স্থান ত্যাগ করতে উদ্যত হলাম।
কিন্তু ভীড় ঢেলে বাইরে বের হওয়া দুষ্কর।
মঞ্চে আবৃত্তিকার হাজির; মঞ্চ টেবিলে তার কবিতার খাতা রেখে সে আবৃত্তি করতে শুরু করল—
"বল বীর –
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!......." 

এক গ্রহ মানুষের সামনে তুমি একটুও ভড়কে যাওনি। তুমি আনন্দিত, তোমার আবেগ-চেতনাবোধ;  তোমার শরীরের যে জোশ— যে আন্দোলন—তুমি মিশে গিয়েছিলে বিদ্রোহীতে। নজরুল হয়ত গর্বিত—বিদ্রোহীরা আজও বেঁচে আছে‌।

হঠাৎ-ই ভূত দেখার মত তুমি আমাকে আবিষ্কার করলে—তোমার মুখখানা কালো মেঘের মত ছেয়ে গেল নিমেষেই—শ্রাবণের বারিধারা ঝরতে আরম্ভ করল তোমার চোখ থেকে—তোমার কবিতার খাতা 
ভিজে চুপচুপে হয়ে যাচ্ছে—কিন্তু তোমার বিদ্রোহী শরীর দমে যাবার পাত্র নয়; তুমি আবৃত্তি করতে থাকলে—
"আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’
ফিং দিয়া দিই তিন দোল;
আমি চপলা-চপল হিন্দোল।...."

শরীরের সব শক্তি খাটিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। 
সাউন্ড বক্স থেকে তোমার আবৃত্তি ভেসে আসছে।
তোমার চোখ থেকে আমি অদৃশ্য জেনে তোমার কন্ঠ 
জড়িয়ে এল—তুমি নিভে গেলে ঠিক দমকা হাওয়ার তোপে। আমি জানি না, কেন আমি পালিয়েছি!
আমি সত্যিই জানি না, কেন আমি পালিয়েছি— তোমাকে ছেড়ে—তোমার সম্মানহানি করে!

১৯-০২-২০২৩
মিরপুর-১, ঢাকা।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন