বাংলাদেশ এবং বিদেশি সিনেমা 

                                                                   —মোবায়দুল সাগর

লাস্ট বলিউডের যে মুভিটা দেখেছি সেটা হল গুরু টাইগার শ্রফ অভিনীত বাগি-৩। মুভির কাহিনী এমন ছিল টাইগার শ্রফের ভাই রিতেশ দেশমুখকে সিরিয়ার জঙ্গি বাহিনী অপহরণ করে। ভাইকে বাঁচাতে টাইগার সিরিয়ায় ছুটে যায় এবং সিরিয়ার জঙ্গি বাহিনীকে একাই দমন করে ভাইকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ছবিটির শুটিং কি সিরিয়াতে করা হয়েছে? অবশ্যই না, ছবিটির শুটিং করা হয়েছে সার্বিয়াতে।‌ সেখানে সিরিয়ার মত করে সেট তৈরি করা হয়েছে। ছবিতে সিরিয়াকে যেভাবে দেখানো হয়েছে আসলে সিরিয়া কি তেমন? সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা, সামাজিক পরিস্থিতি কি তেমন? 
বলিউডের আরেকটি মুভি আছে টাইগার জিন্দা হেঁ। যেখানে অভিনয় করেছেন সালমান খান এবং ক্যাটরিনা কাইফ। মুভিটির কাহিনী এমন যে ইরাকে কর্মরত ভারতীয় এবং পাকিস্তানী নার্সদেরকে ইরাকের জঙ্গি বাহিনী অপহরণ করে। তাদেরকে উদ্ধার করতে ভারতীয় এজেন্ট সালমান খানকে সেখান প্রেরণ করা হয়। জঙ্গি বাহিনীর সাথে এক দুর্ধর্ষ লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে সালমান নার্সদেরকে উদ্ধার করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ছবিটির শুটিং কি ইরাকে করা হয়েছে? অবশ্যই না,ছবিটির শুটিং হয়েছে আবু ধাবি,মরোক্কো  গ্রিস এবং অস্ট্রিয়াতে। সেখানে ইরাকের মত করে সেট তৈরি করা হয়েছে। ছবিতে ইরাককে যেভাবে দেখানো হয়েছে আসলে ইরাক কি তেমন? ইরাকের শাসন ব্যবস্থা,সামাজিক পরিস্থিতি কি তেমন?

হলিউডের একটি মুভি আমার অন্যতম প্রিয় সিরিজ মিশন ইম্পসিবল এর শেষ যে মুভিটা মিশন: ইম্পসিবল- ফল আউট যেটার ক্লাইম্যাক্সে দেখানো হয়েছে কাশ্মীরকে। জঙ্গি বাহিনী পারমাণবিক বোমা নিয়ে কাশ্মীরে অবস্থান করছে। পারমাণবিক বোমা তাদের থেকে ছিনিয়ে আনার জন্য কাশ্মীরে চলে যান আমেরিকান এজেন্ট টম ক্রুজ। সেখানে হয় এক দুর্ধর্ষ লড়াই, হেলিকপ্টার চেজ। পাহাড়ের কিনারায় টম ক্রুজ এবং হেনরি কেভিল হ্যান্ড টু হ্যান্ড লড়াই করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ছবিটির ক্লাইম্যাক্সের শুটিং কি কাশ্মীরে হয়েছে? অবশ্যই না, ছবিটির ক্লাইম্যাক্সের শুটিং হয়েছে নিউজিল্যান্ডে। সেখানের পর্বতমালাকে কাশ্মীর মত দেখানো হয়েছে। আদৌও কি কাশ্মীরের পর্বতমালা তেমন? 

গতকাল একটা মুভি দেখলাম সেটা হল নেটফ্লিক্সের এক্সট্রাকশন। ভারতের মাদক সম্রাটের ছেলেকে অপহরণ করে বাংলাদেশের মাদক সম্রাট। ছেলেকে অপহরণ করে আনা হয় পুরান ঢাকায়। এক সাবেক অস্ট্রেলিয়ান স্পেশাল এয়ার সার্ভিস রেজিমেন্টের সদস্য এবং বর্তমান কালো বাজারের ভাড়াটে গুন্ডা টেইলর রেক বা ক্রিস হেমসওর্থকে ঢাকায় পাঠানো হয় মাদক সম্রাটের ছেলেকে উদ্ধারের জন্য। ক্রিস হেমসওর্থ ঢাকায় এসে বাংলাদেশী মাদক সম্রাট আমির আসিফের সন্ত্রাসী বাহিনী এবং পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীকে একাই দমন করে ছেলেকে উদ্ধার করে‌। 
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ছবিটির শুটিং কি ঢাকায় কিংবা বাংলাদেশে করা হয়েছে? অবশ্যই না, ছবিটির শুটিং হয়েছে থাইল্যান্ড, মুম্বাই, আহমেদাবাদ এবং চেন্নাইতে। সেখানে ঢাকার মত করে সেট তৈরি করা হয়েছে। ছবিতে ঢাকাকে যেভাবে দেখানো হয়েছে ঢাকা কি আসলে তেমন? ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ঢাকায় মাদক সম্রাটের রাজ কিংবা বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী মাদক সম্রাটের কথায় ওঠে বসে এসব কি আসলেই ঢাকায় হয়‌? 

সিনেমা এমনভাবে নির্মাণ করা হয় যাতে সেটা দেখে মনে হয় যেন এটা বাস্তব। কিন্তু এক্সট্রাকশন দেখে তা বাস্তব বলে মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু বাগি-৩, টাইগার জিন্দা হেঁ কিংবা মিশন: ইম্পসিবল-ফল আউট দেখলে তা বাস্তব মনে হয়। কারণ উক্ত দেশ সম্পর্কে আমাদের ধারণা মোটামুটি কম। যার কারণে সেটাই সঠিক বলে মেনে নেয়া হয় । তবে ছবিতে বাংলাদেশকে যেভাবে তুলে ধরে হয়েছে তা সম্পূর্ণ বিকৃত করে। এমন কাহিনী বাংলাদেশের সাথে যায় না বরং পাকিস্তান,ইরাক কিংবা সিরিয়ার সাথে খুব ভালো ভাবে যায়। ছবিটির নির্মাতা শুধু যে হলিউডের তা নয় সেখানে ভারতীয় নির্মাতারাও ছিলেন‌। ভারতীয় নির্মাতারা হয়ত মধ্যপ্রাচ্য নির্ভর কাহিনীতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন তাই বাংলাদেশের দিকে ছুটেছেন। 
কিন্তু ভারতীয় নির্মাতারা কখনোই বাংলাদেশেকে তাদের সিনেমায় সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেনি। তারা পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশকে এক ভাবে। ভারতীয় যে কোন ভাষার সিনেমায় যদি পাঁচ সেকেন্ডের জন্যেও বাংলাদেশকে দেখানো হয় সেটাও থাকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া গুন্ডে সিনেমাটিও তেমনি,সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

তবে এক্সট্রাকশনের কারণে এখন বাংলাদেশকে অনেকেই চিনবে। সাবিলা নূরকে হয়ত আর জ্যারেড লেটোকে বাংলাদেশ কোথায় সেটা আর নতুন করে বলে দিতে হবে না । হতে পারে ডোনাল্ড ট্রাম্পও এখন  বাংলাদেশকে চিনবে, তার সেক্রেটারিকে আর জিজ্ঞাসা করবে না "এই বাংলাদেশটা কোথায় যেন"? তবে মুভিটাতে সবচেয়ে ভালো লেগেছে যেটা,সেটা হল ঢাকার রাস্তায় ফেরারি,বেন্টলি কিংবা মার্সিডিজ গাড়ি চলছে। ঢাকার মাদক সম্রাট বাস করেন এক বিশাল রাজপ্রাসাদে যেটা বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশ পুলিশের সেই চিরচেনা গাড়ি মিটসুবিশির ভ্যান সেখানে নেই তার বদলে সেখানে ঠায় পেয়েছে বিএমডব্লিউ‌। তার থেকেও গর্বের বিষয় মুভির শেষে শোনা যায় বাংলা র্যাপ। সেখানে সারাবিশ্বের কাছে বাংলা র্যাপকে তুলে ধরেছেন র্যাপার নিজাম রাব্বি। সবশেষে বলব ৬৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই অনলাইন প্লাটফর্ম মুভিটা ভালোই লেগেছে।



২৭-০৪-২০২০
মায়াধরপুর, ঝিনাইদহ 
















ট্যাগসমূহ
জীবনবোধের কবিতা ☆  দেশাত্মবোধক কবিতা ☆  ধর্মীয় চেতনার কবিতা ☆ প্রকৃতির কবিতা ☆ প্রতিবাদী কবিতা ☆ প্রেমের কবিতা ☆ বিবিধ কবিতা বিরহের কবিতা ☆ মানবতাবাদী কবিতা ☆ রূপক কবিতা ☆  রম্য কবিতা ☆  শিশুতোষ ছড়া-কবিতা ☆ চতুর্দশপদী কবিতা☆ সনেট কবিতা ☆ মহাকাব্য ☆ ছন্দবৃত্ত কবিতা ☆ মাত্রাবৃত্ত কবিতা ☆ অক্ষরবৃত্ত কবিতা ☆ পদ্য-গদ্য ☆ গল্প ☆ সাহিত্য☆ উপন্যাস ☆ বিখ্যাত কবিতা ☆ ছোট কবিতা ☆ নতুন কবিতা ☆ ভালো বাংলা কবিতা ☆ আনকমন কবিতা ☆ বিরহের কবিতা ☆ কবিতা বাংলা ☆ জীবনমুখী কবিতা ☆ উপন্যাস কি ☆ আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ☆ উপন্যাস কত প্রকার ☆ বাংলা উপন্যাসের ইতিহাস ☆ জনপ্রিয় উপন্যাস ☆ বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও বিকাশ ☆ ঐতিহাসিক উপন্যাস ☆ বাংলা উপন্যাসের ধারা ☆ শিক্ষনীয় গল্প ☆ হাসির গল্প ☆ বাংলা গল্প ☆ গল্প  রোমান্টিক ☆ জীবনের গল্প ☆ ভালো গল্প ☆ ছোট গল্প ☆ ডাইনি গল্প








Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন