প্রত্যেক মানুষের একটা প্রতিভা থাকে। সেটা সাধারন হোক আর অসাধারন। প্রতিভা লুকিয়ে রাখার মত কোনো জিনিস নয়। প্রতিভা কখনো লুকিয়ে থাকে না,সেটা বরাবরই প্রকাশ পায়। আপনি ভালো গান গাইতে পারেন, ভালো নাচতে পারেন, ভালো মানুষ হাসাতে পারেন। তবে এই প্রতিভা যদি জনসমক্ষে প্রকাশ না করেন তবে সেই প্রতিভা মূল্যহীন। আপনাকে অবশ্যই আপনার প্রতিভাকে দেখাতে হবে মানুষের মাঝে।
বর্তমান সময়ে স্যোসাল মিডিয়ার কল্যাণে সকলে প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। ইউটিউবে নতুন নতুন প্রতিভাবান ব্যক্তি দেখা যাচ্ছে। ইউটিউবে আপনি আপনার প্রতিভার ভিডিও যেমন নাচ,গান, অভিনয় ইত্যাদি শেয়ারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে আপনার প্রতিভা তুলে ধরতে পারছেন। প্রতিভা প্রদর্শন করার সুযোগ বরাবরই ফ্রীতে দিয়ে আসছে ইউটিউব। শুধু ফ্রীতেই নয় তারা সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অর্থ-ও দিচ্ছে।
ইউটিউব ছাড়া বর্তমান সময়ে খুব ভাইরাল হয়ে পড়েছে ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক। মাত্র পনের সেকেন্ডের ভিডিও এখানে আপনি শেয়ার করতে পারেন। মূলতঃ এখানে আপনার দৈনন্দিন প্রাত্যহিক জীবনের সাধারন ভিডিও শেয়ার করতে পারেন। টিকটকের মাধ্যমেও আপনি টাকা আয় করতে পারেন।
টিকটক একটি চৈনিক অ্যাপ। যা ২০১৬ সালে চীনে মুক্তি পায় এবং তার ২ বছর পর ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী
মিউজিক্যালি নামে মুক্তি পায়। বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাওয়ার পর টিকটক ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়ে। সবাই অর্থাৎ ছেলে বুড়ো এই অ্যাপ ডাউনলোড করেন। এ বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের মে মাসে টিকটক ডাউনলোড হয়েছিল ১১৯ মিলিয়ন বার। যা বিশাল। টিকটক ব্যবহারকারীর দিকে সর্বপ্রথমে রয়েছে ভারত। ভারতে টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১২০ মিলিয়ন এর পরের স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে ব্যবহারকারী রয়েছে প্রায় ৪০ মিলিয়ন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে তুরস্ক, প্রায় ২৯ মিলিয়ন টিকটক ব্যবহারকারী রয়েছে তুরস্কের।
টিকটক যেমন ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছে ঠিক তেমনি এটা ভাইরাস মত কুপ্রভাব ফেলেছে সমাজের সকল স্তরের মানুষের উপর। সবাই তাদের কাজকর্ম রেখে টিকটক ভিডিও করছে। কেউ রাস্তায় পড়ে গেছে সেটা ভিডিও করে টিকটকে দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোনো সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে সেখানে অবস্থা ভিডিও করে দেওয়া হচ্ছে টিকটকে। অথচ তারা সেই সকল ভুক্তভোগীদের সাহায্য না করে তাদের অবস্থা দেখে তামাশা করছেন। ছোট কোমলমতি স্কুলগামী শিশুরাও এর প্রভাব থেকে রেহাই পাইনি। তারাও টিকটক ভিডিও করতে ব্যস্ত। টিকটকে প্রতিভা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। মাত্র পনের সেকেন্ডের ভিডিওতে আপনি কি দেখাবেন?
টিকটকের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশে এবং ভারতে। ভারতের সকল স্তরের মানুষ টিকটক ভিডিও তৈরি করেছেন। তাদের ভিডিওগুলো ছিল সাধারন যেখানে কোনো প্রতিভা বলে কিছু নেই। দামী কাপড়, দামী রিসোর্ট এ স্যুটিং করে বানানো এসব ভিডিও যার কোনো অর্থ নেই। ভারতে টিকটক এতটাই ভাইরাল হয়েছে যে একজন টিকটক স্টারের ফলোয়ার একজন বলিউড স্টারের সমান। অথচ টিকটকের এইসব সেলিব্রিটিদের কোনো প্রতিভা নেই। টিকটকে জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য এসব মানুষ সবকিছু করতে রাজি আছে। অনেক ছেলেরা তাদের চুলে বাহারি রকমের রং করছে। কোনো কোনো দোকানদার তার দোকানে বসে টিকটক ভিডিও করছে। এদিকে তার ব্যবসা লাটে উঠুক না কেন তাতে তাদের পরোয়া নেই।
সবশেষ ভারতে টিকটক বিতর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেন ইউটিউবার ক্যারিমিনাটি। দ্য এন্ড শিরোনামের ঐ ভিডিওতে খুব কম সময়ে লাইকর
বন্যা বয়ে যায় । যদিও ক্যারিমিনাটি ভিডিওতে টিকটকার আমির সিদ্দিকি কে খুব বাজে ভাষায় মন্তব্য করে। যার দরুন ইউটিউব থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়া হয়। এতে উত্তেজনার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। সবাই টিকটক আনইনস্টল করে। প্রশ্ন উঠে টিকটক ব্যানের। সবাই টিকটকের ব্যানের জন্য ট্রেন্ড তৈরি। সকল ইউটিউবার সবাইকে সংগঠিত করে।
প্লে স্টোরে টিকটকে সবাই লো রেটিং দেয়। প্লে স্টোরে টিকটকের রেটিং ৪.৬ থেকে ১.৩ এ নেমে দাড়ায়। যদিও পরে টিকটকের রেটিং আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসে।
এ বছরের মে মাসের পাঁচ তারিখে চীন ভারতের লাদাখে হামলা চালালে দুই দেশের মধ্যে খুবই উত্তেজনা বিরাজ করে। দুই দেশ ছোট ছোট যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। দুই দেশের বহু সেনা সদস্য নিহত হন এসব যুদ্ধে। ভারতে নতুন ডাক ওঠে চীনা পন্য বর্জনের। সেই সুত্র ধরে গত জুনে ভারত ৫৯টি চাইনিজ অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ করে। এই ৫৯টি অ্যাপের মধ্যে ছিল টিকটক। ভারতে টিকটক নিষিদ্ধের মাধ্যমে শেষ ভারতে টিকটক অধ্যায়।
টিকটক শুধু ভারতেই কুপ্রভাব ফেলেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এর প্রভাব পড়েছে। সেখানেও টিকটক ব্যানের প্রশ্ন উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে খুব শিঘ্রই সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশে টিকটকের কুপ্রভাব ভারতের মতই। খুব সম্প্রতি বাংলাদেশেও টিকটক ব্যানের প্রশ্ন উঠেছে। আর এই প্রশ্ন উঠেছে টিকটকার অপু ভাই এর জন্য। টিকটকার অপু ভাই যে একজন সাবেক নাপিত। চুল কেটে টাকা জমিয়ে সে একটি স্মার্টফোন কিনে। বন্ধুদের কাছ থেকে টিকটকের কথা জানতে পারেন তিনি। সেখান থেকে তিনিও টিকটকে অনর্থক ভিডিও বানান। যে ভিডিও না বিনোদিত করে না শিক্ষনীয়। অপু ভাই নাপিত হওয়ার কারণে তার চুলের স্টাইল একটু অস্বাভাবিক। রংধনুর মত তার চুলের রং যা খুবই বেমানান। টিকটকার অপু ভাই খুব অল্প সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তার নামে বিভিন্ন ফ্যান গ্রুপ গড়ে ফেসবুকে। গড়ে গ্যাং কালচার। বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয় এই গ্যাং। খুব সম্প্রতি টিকটকার অপু ভাই এক প্রকৌশলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারপিট করে জখম করে। ভুক্তভোগী প্রকৌশলী তার বিরুদ্ধে পুলিশি মামলা করেন। গত ৩ আগস্ট পুলিশ অপু ভাইকে গ্রেপ্তার করে।
All copyright reserved by
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন