লাল জামা 

            —মোবায়দুল সাগর


    শীতকালের বেলা এমনিতেই তাড়াতাড়ি পড়ে যায়। ২৭শে রমজান শুক্রবার। রৌদ্রজ্জ্বল একটি দিন। হাসান মিয়া খুব বিরক্ত হয়ে তার বড় ছেলে শরিফুলকে বললেন, " আজান দিয়েছে দেড় ঘন্টা আগে। এখনো টমেটো তুলতে যাসনি? তোর কি কখনো সময় জ্ঞান হবে না?" যদিও যোহরের আজান মিনিট পাঁচেক আগে দিয়েছে। কিন্তু বরাবরের মতই হাসান মিয়া তা বাড়িয়ে বলছেন। হাসান মিয়া সময় অপচয় মোটেই পছন্দ করেন না। অথচ এদিকে শরিফুল আগে থেকেই টমেটো তুলে নিয়ে এসেছে। টমেটো গুলো সে অতি যত্নে চাষ করেছে। এতটা যত্ন সে নিজের শরীরের প্রতিও নেই না। 
        
       গত পরশুদিন মেজো ফুপু এসেছিলেন তাদের বাড়িতে ঘুরতে। তার সাথে হাসান মিয়ার, পরিবারের আত্মীয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে, পিতার উত্তরসূরী হিসেবে যে জমিটুকু তিনি পেয়েছিলেন তা বিক্রয়ের মাধ্যমে। ফুপু শরিফুলকে দেখে বললেন, "হ্যাঁ রে, শরিফুল, দিন দিন এত শুকায় যাচ্ছিস ক্যান? শরীল গতরের দিকে কি যত্ন টত্ন নিস নে নাকি?" আসলেই শরিফুল আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে। হঠাৎ তার মনে এক দুশ্চিন্তা গেঁথে গেছে। প্রায় রাতে সে দুঃস্বপ্ন দেখে। এক বিস্তৃর্ণ ফাঁকা মাঠে সে দাঁড়িয়ে আছে‌। হঠাৎ কোথা থেকে গলায় ঘন্টা বাঁধা এক গরু তার পাশে এসে দাঁড়ায়। যখন সে গরুটির দিকে তাকায় তখন সে দেখে গরুটির দুইটা চোখ নেই। যেন কেউ গরুটার চোখদুটো সাঁড়াশি দিয়ে উপড়ে ফেলেছে। এমন বিভৎস অবস্থা দেখার সাথে সাথে শরিফুলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন ওর প্রচন্ড তৃষ্ণা পায়। সারারাত আর ঘুম আসে না। 
       
       শরিফুল ওর বাবাকে কিছু বলল না। হাসান মিয়া গোসল করতে পুকুর ঘাটের দিকে গেল। জুম্মার নামাজ পড়ে তাকে তুলারামপুর বাজারে যেতে হবে, টমেটো গুলো নিয়ে। তুলারামপুর বাজারে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। হাসান মিয়ার ছোট ছেলে আশরাফুল, ও পাড়ার বালির গর্ত থেকে 'নই' খেলে বাড়ি ফিরছে। সামনের গরমে আশরাফুলের বয়স সাত  হবে। ফুটফুটে ফর্সা এক ছেলে। যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোনো দেব শিশু। ওর কোনো আবদারই হাসান মিয়া রাখতে পারেন না। গত রবিবার দক্ষিণ পাড়ার জগা কাশেমের ছেলে রিন্টুকে সে একটি লাল জামা পরতে দেখেছিল। বাড়ি এসে বাবার কাছে সে তেমনি একটি লাল জামা কিনে দেওয়ার আবদার জানিয়েছিল। প্রত্যুত্তরে বাবা বলেছিলেন 'আচ্ছা সামনের হাটের দিন দেখব, তুই এখন যা, বড্ডো জ্বালাস তুই।' আশরাফুল কিছুটা অভিমান নিয়ে শরিফুলের কাছে গেল কারণ সে জানে ওর বাবা ওকে মিথ্যা বলেছে। কখনোই ওর জন্য লাল জামা আনবে না। গত কোরবানির ঈদে একটা নীল রঙের ছাপা জামা কিনে দিয়েছিল, তাও অনেক বলার পরে।
        
       "মা? ও মা? মা?"

      "র, র। তোর মা মরে যায়নি রে! সারাদিন খালি টো টো করে ঘুরে বেড়ানো আর দু'বেলা বাড়ি এসে ভাত খাওয়া। কত করে যে শরিফুলের আব্বারে বললাম,ছ্যামড়াডারে ইশকুলে ভর্তি করায়ে দেও। আমার কথা সে কানেই তুইল্লো না।"

       "মিয়া ভাই কনে?" 
        
       "মিয়া ভাই কনে তা আমি কি করে বলব। দেগগে ওর ঘরে আচে কিনা?" 

‌       আশরাফুল, শরিফুলের ঘরের দিকে গেল। শরিফুলের সাথে আশরাফুলের খুব ভালো সখ্যতা আছে। যদিও ওদের বয়সের পার্থক্য পনের/ষোলো বছরের। আশরাফুল, শরিফুলের ঘরের দরজার সামনে যেয়ে ভিতরের দিকে উঁকি দিচ্ছে। কারণ শরিফুল তাকে শিখিয়েছে কারো ঘরে ঢোকার জন্য তার অনুমতি প্রয়োজন। বিনা অনুমতিতে কারো ঘরে ঢোকা চরম অন্যায়। যদিও এই বয়সে আশরাফুল অন্যায় জিনিসটা কি এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। তবুও সে ওর বড় ভাইয়ের কথা অমান্য করে না।

       শরিফুল তখন ওর পড়ার টেবিল গোছাচ্ছিল। আশরাফুলকে উঁকি দিতে দেখে বলল, 'কি রে উঁকি দিচ্ছিস কেন? ভিতরে আয়।' আশরাফুল ভিতরে যেয়ে ওর শোবার খাটে বসল। আশরাফুল খেয়াল করল শরিফুলের পড়ার টেবিলে আজ একটা নতুন বই।  
       
      "কি বই ওটা?"
      
     শরিফুল বইটির দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত করে বলল,"এটা? এটা হ'ল ব্রাম স্টোকারের লেখা একটি উপন্যাস 'ড্রাকুলা।"

‌     আশরাফুল অনেকক্ষণ চুপ করে বসে আছে দেখে শরিফুল‌ বলল, "কিছু বলবি?"

      আশরাফুল কিছুটা সংকোচ নিয়ে বলল, "আজ যে শুক্রবার। তোমার মনে নেই? তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে!"
‌‌

       শরিফুল, আশরাফুলের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে,"আহ্ কত মায়াবী দেখতে আমার ভাইটা! এই বাড়িতে ওর একদমই মানায় না। ওর মানায় কোনো এক বড় বাড়ীতে, যার সামনে রয়েছে বিশাল বাগান। সেই বাগানে ফুটে আছে দেশী-বিদেশী বাহারি ফুল। প্রতিদিনই ওর মনে নতুন নতুন বায়না জন্ম নেয়। কিন্তু অভাবের জন্য ওর কোনো ইচ্ছাই পূরণ করা হয় না। একবার বায়না ধরেছিল মনিহারে যেয়ে সিনেমা দেখবে। কিন্তু ওর সেই বাসনা অপরিপূর্ণই থেকে গেছে।" শরিফুল খেয়াল করল শীতের প্রকোপে আশরাফুলের ঠোঁট, মুখ ফেটে গেছে। গায়ে একটা উলের সোয়েটার।‌ যেটা দুই বছরের পুরনো। যা ওর গায়ে এখন অনেক ছোট হয়ে গেছে। তারপরেও সে অইটা পরে হাসিমুখে এ পাড়া থেকে ও পাড়া করে।
       

    শরিফুল একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, "আমার সোনা ভাই আমার কাছে একটা সামান্য আবদার করেছে, আর সেটা আমি পূরণ করব না তা কখনো হয়। আব্বা বেরিয়ে যাক তারপর আমি যেয়ে তোর জামা নিয়ে আসব। তুই কাউকে বলবি না যে, আমি বাজারে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি গোসল করে নে, নামাজের সময় হয়ে গেছে।" আশরাফুল গালভর্তি হাসি নিয়ে শরিফুলের ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। 
    
‌    জুম্মার নামাজ শেষ করে; দুপুরের খাবার খেয়ে হাসান মিয়া টমেটো গুলো একটা ঝুড়িতে নিয়ে তুলারামপুর বাজারের দিকে রওনা দিলেন। আজ তার অনেক কাজ। গোপাল মহাজনের কাছে তিনি দুইশো টাকা পান, সেটা নিতে হবে। গত হাটে তার কাছে তিনি মরিচ এবং বাঁধাকপি বিক্রি করেছিলেন। গোপাল মহাজন বলেছিলেন শুক্রবার তার টাকা পরিশোধ করে দিবেন। বাজারের শামসদ্দি দোকানি, হাসান মিয়ার কাছে ১২৩ টাকা পান। হাসান মিয়া তার থেকে নিত্যপন্য বাকিতে কেনেন।

     হাসান মিয়া তুলারামপুর বাজারে পৌঁছাতেই প্রচন্ড রেগে গেলেন। আকাশ যেখানে রোদে ঝলমল  করছিল সেখানে এখন ঘন কালো মেঘ। এসবের পরে তার সাথে আবার মুসা করিমের সাথে দেখা। মুসা করিম লোকটাকে তার একদমই পছন্দ না। লোকটা খালি খালি তার সময় নষ্ট করেন। হাসান মিয়া ভ্রু দুইটা কিছুটা কুঁচকে মুসা করিমকে বললেন, ' ভাই আমার টমেটো বিক্রি করতে হবে, এখন আসি আপনার কথা অন্য এক সময় শুনবো।' হাসান মিয়ার এমন বক্তব্য শুনে মুসা করিমের মুখ আজকের মেঘের থেকেও ঘন কালো বর্ণ ধারণ করল। 

       হাসান মিয়ার রাগ আরো বৃদ্ধি পেল যখন তিনি শুনলেন পাইকাররা টমেটোর কেজি পাঁচ টাকা করে দিচ্ছে। তিনি রতন, সলেমান, জামাল, নিয়ামত সহ তার আরো পরিচিত পাইকারদের কাছে গেলেন। কিন্তু সবাই তাকে হতাশ করল। তারা টমেটোর কেজি পাঁচ টাকার বেশি দিতে রাজি নয়। শেষে গোপাল মহাজন তার থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা কেজি দরে টমেটো কিনলেন। এবং আগের দুইশ টাকাও পরিশোধ করলেন। হাসান মিয়া, শামসদ্দির একশো তেইশ টাকা পরিশোধ করে, তার থেকে হাফ কেজি সরিষার তেল এবং একটা কাপড় কাচার সাবান কিনলেন। সেগুলো ঝুড়িতে নিয়ে বড় রাস্তার দিকে গেলেন।
       
       হঠাৎ তিনি রাস্তার দিকে এক বিকট শব্দ শুনলেন। তিনি দ্রুত রাস্তার দিকে এগিয়ে গেলেন। গিয়ে দেখেন একটা বাস একটা লোককে ধাক্কা দিয়েছে। লোকটি রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে।মাথাটা থেঁতলে গেছে। মস্তিষ্ক প্রায় বেরিয়ে এসেছে। চোখদুটো কোটর থেকে উঠে এসে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। সবাই দেখছে, কিন্তু কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না। হাসান মিয়া তাড়াতাড়ি চোখ দুটো হাতে উঠিয়ে নিয়ে লোকটির দিকে এগিয়ে গেলেন। তিনি লোকটিকে সোজা করতেই তার চেহারা দেখে তিনি দুই-তিন হাত পিছে ছিটকে পড়লেন। যেন কয়েকশ' ভোল্টের বিদ্যুৎ তাকে ঝটকা দিয়েছে। তার চোখ বড়, বড় হয়ে আসছে। নিচের ঠোঁট কাঁপছে, হাত পা-ও কাঁপা শুরু করেছে। সারা শরীর কাঁপছে। তার রক্ত ঠান্ডা হয়ে আসছে। যেন তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ গেছে। তিনি হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠে বললেন, "শরিফুল, আমার শরিফুল! তিনি শরিফুলের মাথাটা কোলে নিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে বলছেন, "ওঠ রে আব্বা। আমার শরিফুল রে! আমার বুকটা খালি হয়ে গেল। আমার বুকটা খালি হয়ে গেল। হে আল্লাহ। আমার আব্বা চলে গেল। আল্লাহ, হে আল্লাহ। আমার শরিফুল! আমার শরিফুল।"

       সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে শরিফুলের লাশকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হ'ল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেদিন রাতটা শরিফুলের লাশটাকে হাসপাতালে রেখে দিল। যখন ওর লাশ মর্গে কাটা হচ্ছিল তখন ডোমেদের সাথে ছিল হাসান মিয়ার মেজো ছেলে মুস্তাফিজুর। সে খুলনায় থাকত।  তার ভাইয়ের সেই বিভৎস কাটা শরীর দেখে প্রচন্ড রকমের ভয় ওর মনে জন্ম নেয়। সকাল আটটার দিকে হাসপাতাল থেকে শরিফুলের লাশ ওর গ্রামে নেওয়া হয়। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, গ্রামের সবাই উপস্থিত ছিল ওদের বাড়ি। বাড়ির মহিলারা কেঁদেই চলেছে। যা অনেক দূর থেকেও শোনা যাচ্ছে। শরিফুলের মাকে বলতে শোনা গেল, "আমার শরিফুল কয়দিন ধইরে এটটা খারাপ স্বপ্ন দেখচে।‌ খালি দেখে গরুর চোখ নেই।" হাসান মিয়া উদাস হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় বসে আছেন। তার শুধু মনে হচ্ছে তার বুকটা যেন খালি,খালি হয়ে আছে। তিনি মাঝে মাঝে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠছেন। 

  ‌    আশরাফুলের কাছে ব্যাপারটা দুঃস্বপ্নের মত লাগছে। সে নিজের উপর দোষারোপ করছে। কেন সে ওর ভাইকে জামা এনে দেওয়ার কথা বলল। ও যদি না বলত তাহলে ওর ভাই তো আজ বেঁচে থাকত। ওকে গল্প বলে শোনাতো। দূর্গা আর অপুর গল্প। আশরাফুল, শরিফুলের লাশের পাশে বসে শরিফুলের চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। যদিও শরিফুলকে চেনার উপায় নেই। মুখ খানাতে আগের মত আর হাসি হাসি ভাব নেই। মুখটা বিকৃত হয়ে গেছে। যা দেখলে তাগড়া জোয়ান ছেলেও ভয় পাবে। আশরাফুল মোটেও ভয় পেল না। শরিফুল যে ওর ভাই। আশরাফুল, শরিফুলের নিথর দেহটা একটু ছুঁয়ে দেখল। হিম শীতল ঠান্ডা! 

        বাদ যোহর শরিফুলকে হাসান মিয়ার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। হাসান মিয়া শরিফুলের কবরের পাশে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে রইলেন আর কি যেন বিড়বিড় করে বলতে থাকলেন। আশরাফুলও, অনেকক্ষন ধরে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ও বাড়ি ফিরে শরিফুলের ঘরের সামনে যেয়ে কেঁদে কেঁদে বলল, 'ভাই, ভিতরে আসব?' ও যেন শুনতে পেল শরিফুলের সেই চিরাচরিত মিষ্টি কন্ঠে, "ভিতরে আয়!" 



১৪-১২-২০২০
আলাদাৎপুর, নড়াইল।

























ট্যাগ:

জীবনবোধের কবিতা ☆  দেশাত্মবোধক কবিতা ☆  ধর্মীয় চেতনার কবিতা ☆ প্রকৃতির কবিতা ☆ প্রতিবাদী কবিতা ☆ প্রেমের কবিতা ☆ বিবিধ কবিতা বিরহের কবিতা ☆ মানবতাবাদী কবিতা ☆ রূপক কবিতা ☆  রম্য কবিতা ☆  শিশুতোষ ছড়া-কবিতা ☆ চতুর্দশপদী কবিতা☆ সনেট কবিতা ☆ মহাকাব্য ☆ ছন্দবৃত্ত কবিতা ☆ মাত্রাবৃত্ত কবিতা ☆ অক্ষরবৃত্ত কবিতা ☆ পদ্য-গদ্য ☆ গল্প ☆ সাহিত্য☆ উপন্যাস ☆ বিখ্যাত কবিতা ☆ ছোট কবিতা ☆ নতুন কবিতা ☆ ভালো বাংলা কবিতা ☆ আনকমন কবিতা ☆ বিরহের কবিতা ☆ কবিতা বাংলা ☆ জীবনমুখী কবিতা ☆ উপন্যাস কি ☆ আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ☆ উপন্যাস কত প্রকার ☆ বাংলা উপন্যাসের ইতিহাস ☆ জনপ্রিয় উপন্যাস ☆ বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও বিকাশ ☆ ঐতিহাসিক উপন্যাস ☆ বাংলা উপন্যাসের ধারা ☆ শিক্ষনীয় গল্প ☆ হাসির গল্প ☆ বাংলা গল্প ☆ গল্প  রোমান্টিক ☆ জীবনের গল্প ☆ ভালো গল্প ☆ ছোট গল্প ☆ ডাইনি গল্প



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন