রক্ত রহস্য - ১

—মোবায়দুল সাগর


       এতো বিশাল বড় বাগানবাড়ি! এমন বনের মধ্যে যে এতোবড় বাড়ি থাকতে পারে তা আমার কল্পনাতীত। বাড়িটা না-কি আগে জমিদারদের ছিল‌। এখন সরকারি গেস্ট হাউস করা হয়েছে। এর মাঝেই সিনথিয়া চেঁচিয়ে বলল, "মা, মা দেখ কি বিশাল এক মূর্তি!" আমরা যেয়ে দেখি বাড়ির ভেতরে কালো রঙের এক বৃহৎকায় মূর্তি রয়েছে। সম্ভবত কোনো এক জমিদারদের প্রতিকৃতি। তাঁর হাতে রয়েছে শূন্যে তুলে ধরা এক তলোয়ার। ঘন্টু মামা বেশ ভালো করেই মূর্তিটা দেখতে লাগল। সে বলল,"এটা নিশ্চয় কষ্টিপাথরের মূর্তি, অর্থাৎ এর বাজার মূল্য অনেক।" আমি জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে বললাম, "এটা যে কষ্টিপাথরের তুমি কিভাবে নিশ্চিত হলে?" জবাবে ঘন্টু মামা বলল, "এজন্যই তো সবাই আমাকে ঘন্টু গোয়েন্দা বলে ডাকে!" 
          
         বাবা আগে থেকেই রুম বুক করে রেখেছিলেন। আমরা সবাই যে যার রুমে যেয়ে উঠলাম। আমি আর ঘন্টু মামা এক ঘরে। পাশের ঘরে বাবা-মা এবং আরেকটি ঘরে সিনথিয়া এবং জাহ্নবী ভাবি। শীতে মানুষ যায় কাশ্মীর,নেপাল, সুইজারল্যান্ড,ইতালি প্রভৃতি দেশে আর আমরা এসে পড়েছি এক পত্রঝরা বনে। শীতকাল হওয়াতে যে বনের কোনো গাছেই এখন পাতা নেই। তবে আমরা একা নয় আরো দুই দল এই গেস্ট হাউসে এসেছে। তারমানে তাদের দলেও বাবার মত লোক রয়েছেন। আমার মন খারাপ দেখে ঘন্টু মামা বলল, "ওঠ রে দান্তে, চল অরণ্য দর্শন করে আসি!"

          "মামা, তুমি আমাকে দান্তে বলে আর ডাকবে না বলে দিচ্ছি।" 

          "তুই তো দারুন কবিতা লিখিস। তার জন্যই তো তোকে দান্তে বলে ডাকি। দান্তে কি আর যে সে কবি।" 

        "তুমি আর ডাকবে না বলছি। শোন আমি একটা ম্যাপ নিয়ে এসেছি এই বনের। কোথায় কি আছে তার সবকিছু আছে এই ম্যাপে। আর শোনো -"

           বলতেই আমার ফোন বেজে উঠল। আমার বন্ধু শাহীনের মেসেঞ্জারে ভয়েস কল। 

       "হ্যালো!"

        "কিরে কি খবর? বল তো এখন আমি কোথায় আছি?"

         "তুই তো প্রত্যেক শীতে কক্সবাজারে যাস। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই, তাই তো?"

          "আমি এখন কথা বলছি জুরিখ লেকের পাড় থেকে?"

           ওর কথা শুনেই আমার আক্কেল গুড়ুম!

           "বলিস কিরে? কবে গেলি ওখানে?" 

           "গতকাল এসেছি আমি, উইথ দি হোল ফ্যামিলি। যাই হোক তোকে আবার পরে ফোন করব।" বলেই ফোনটা কেটে দিল। 

            এতে করে আমার মন আরো খারাপ হয়ে গেল। ঘন্টু মামা বলল, "কিরে কার ফোন?" 

          "আর বলো না আমার বন্ধু শাহীন। ঐ যে গত ঈদে আমরা একসাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম। জানো ও এখন সুইজারল্যান্ডে।"

          "তো কি হয়েছে? চল বন থেকে একটু পায়চারি করে আসি দেখবি ভালো লাগবে।" 

           "জানিস দান্তে একবার কি হয়েছে। আমরা একবার স্কুলের পিকনিকে গিয়েছি লঞ্চযোগে সুন্দরবন। খুলনা লঞ্চ ঘাট থেকে সুন্দরবন পৌঁছাতে পুরো দশ ঘন্টা লাগল। ভাবতে পারছিস ব্যাপারটা, এই সময় ঢাকা থেকে লন্ডনের বিমান পথের সমান। তারপর সুন্দরবন যেয়ে দেখি ছোট্ট এক এলাকা নিয়ে একটা পার্ক গড়ে উঠেছে। সেখানেই সবকিছু। বনের ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। আমাদের সবার মন খারাপ হয়ে গেল এই ভেবে যে দশ ঘন্টা নৌভ্রমণ করে এসে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে আমরা সরাসরি কাছ থেকে দেখতে পারব না।" 

         মামা একপ্রকার আমাকে ছেলেমানুষী আশ্বাস দিয়ে বলল, "তবে দেখিস দান্তে এবার আমি রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখেই ছাড়ব। এই বনেও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাস ছিল। যদিও সর্বশেষ দেখা গিয়েছে ১৯৬২ সালে। তারপরেও চল যদি স্বাধীন বাংলার রাজার সাথে একবার দেখা হয়ে যায়।"

            আমি আর মামা হাফ প্যান্ট আর মোটা করে একটা শার্ট এবং মাথায় একটা ক্যাপ পরে বেরিয়ে পড়লাম জঙ্গলের দিকে। 

          শীতের বিকাল শুরু হয় খুব তাড়াতাড়ি। এখন তিনটা বাজে অর্থাৎ এখন বিকাল। এই বনের গাছগুলো খুব উঁচু। গাছে পাতা না থাকায় সূর্যটা দেখা যাচ্ছে। আমার কাছে কম্পাস ছিল তাই পূর্ব দিক বরাবর আমরা এগিয়ে গেলাম বনের ভিতরে। বেশ খানিকক্ষণ হাঁটলাম কিন্তু কোনো প্রাণীর দেখা পেলাম না‌। কয়েকটা পাখি দেখেছিলাম সেগুলোর ছবি হুট করে তুলে নিল ঘন্টু মামা। প্রায় দুই ঘন্টা ঘুরে আমরা বাড়িতে ফিরে এলাম। ফিরে এসে এক দুঃসংবাদ শুনলাম। সকালে যে কালো মূর্তিটা দেখেছিলাম সেটা চুরি হয়ে গিয়েছে। 

         ঘন্টু মামা আর আমি সেখানে যেয়ে দেখলাম মূর্তি একবারে হাওয়া। পুলিশ এসেছে; তারা বাড়ির কর্মচারী এবং অন্যান্য লোকদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

         ঘন্টু মামা আমাকে অসহিষ্ণু হয়ে বলল, "শীঘ্রই একটা ড্রপার নিয়ে আয়।"

         "এখন ড্রপার কোথায় পাবো? আচ্ছা দেখছি।"

         আমি ড্রপার খুঁজে নিয়ে এসে ঘন্টু মামার হাতে দিলাম। মামা দেখলাম একহাটু গেড়ে বসে মাটি থেকে কি একটা ড্রপারে তুলে নিল। আমি,"বললাম কি ওটা?"

          "দেখ কী?"

          "ওহ মাই গড! এ তো দেখছি রক্ত।"

          "ঠিক ধরেছিস। চল।"

          "কোথায়?" 

           "হাসপাতালে; এই রক্ত সম্পর্কে জানতে হবে।"

           আমরা বেরিয়ে পড়ব ঠিক তখনই মা বলল, "এই তোরা সারাদিন কোথায় ছিলি? খাবি চল।"

         মামা বলল, "এখন খাওয়ার সময় নেই আমরা এখন কেল্লা ফতে করতে চলেছি।"

         আমরা রক্ত পরীক্ষার ফল হাতে নিয়ে গেস্ট হাউসে ফিরলাম। চোর বা চোরের দল চুরিটা এমনভাবে করছে যে কোনো প্রমাণ রেখে যায়নি। তবুও ঘন্টু মামা এই একবিন্দু রক্ত নিয়ে এত উৎসাহী কেন বুঝতে পারলাম না। 

























ট্যাগ:

জীবনবোধের কবিতা ☆  দেশাত্মবোধক কবিতা ☆  ধর্মীয় চেতনার কবিতা ☆ প্রকৃতির কবিতা ☆ প্রতিবাদী কবিতা ☆ প্রেমের কবিতা ☆ বিবিধ কবিতা বিরহের কবিতা ☆ মানবতাবাদী কবিতা ☆ রূপক কবিতা ☆  রম্য কবিতা ☆  শিশুতোষ ছড়া-কবিতা ☆ চতুর্দশপদী কবিতা☆ সনেট কবিতা ☆ মহাকাব্য ☆ ছন্দবৃত্ত কবিতা ☆ মাত্রাবৃত্ত কবিতা ☆ অক্ষরবৃত্ত কবিতা ☆ পদ্য-গদ্য ☆ গল্প ☆ সাহিত্য☆ উপন্যাস ☆ বিখ্যাত কবিতা ☆ ছোট কবিতা ☆ নতুন কবিতা ☆ ভালো বাংলা কবিতা ☆ আনকমন কবিতা ☆ বিরহের কবিতা ☆ কবিতা বাংলা ☆ জীবনমুখী কবিতা ☆ উপন্যাস কি ☆ আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ☆ উপন্যাস কত প্রকার ☆ বাংলা উপন্যাসের ইতিহাস ☆ জনপ্রিয় উপন্যাস ☆ বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও বিকাশ ☆ ঐতিহাসিক উপন্যাস ☆ বাংলা উপন্যাসের ধারা ☆ শিক্ষনীয় গল্প ☆ হাসির গল্প ☆ বাংলা গল্প ☆ গল্প  রোমান্টিক ☆ জীবনের গল্প ☆ ভালো গল্প ☆ ছোট গল্প ☆ ডাইনি গল্প



 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন