ধর্ম বিশ্বাস ও বিশ্বাসের পরিমাপ
মোবায়দুল সাগর

র্ম কী, কোথা থেকে এলো এবং কেন এলো। ধর্মের প্রয়োজনীয়তাই বা কতটুকু এই সমাজে। একটি সুস্থ এবং সুন্দর চিন্তাশীল মস্তিষ্ক থাকায় কী মানুষের মনে ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। এই পৃথিবীতে কত সমাজ,কত জাতি এবং কত ভাষা রয়েছে। এই প্রত্যেকটি সমাজ,জাতি এবং ভাষায় রয়েছে আলাদা-আলাদা ধর্ম। যখন সমাজ,জাতি এবং ভাষা ছিল না তখন কী ধর্ম ছিল। লক্ষ বছরের বিবর্তনে একটি বিশেষ প্রজাতি যখন প্রাক-মানুষে পরিনত হল তখন কী সেই অর্ধ-মানুষগুলোর মাঝে ধর্ম সম্পর্কে কোনো ধারণা জন্মেছিল। তখন তারা গাছে বাস করে, ফলমূল খেয়ে আধুনিক মানুষে পরিনত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। এরপর যখন তারা আগুন আবিষ্কার করে আধুনিক মানুষে পরিনত হওয়ার প্রথম সিড়িতে পা দিল তখনও কী ধর্ম তাদের মস্তিষ্কে উদয় হয়েছিল। এরপর তারা যখন পাথর আবিষ্কার করল এবং পাথর থেকে আগুন ও হাতিয়ার আবিষ্কার করতে সক্ষম হল তখনও কী ধর্ম তাদের ধারণায় ছিল। মানুষের মস্তিষ্ক যতই উন্নত হতে শুরু করল ততই তারা চিন্তাশীল হতে শুরু করল।

তাদের যখন চিন্তা করার ক্ষমতা আসলো তখন এই চিন্তাও তাদের মাথায় ঢুকে গেল – এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা কে, মাথার উপর যে সূর্য্য,চাঁদ,তারা এবং ওই বিশাল আকাশের সৃষ্টিকর্তাই বা কে। পৃথিবীর এই জীবজন্তু, গাছপালা, মাটি,বায়ু,পানির-ই বা সৃষ্টিকর্তা কে। তখনই মানুষ প্রবর্তন করল ধর্ম, প্রবর্তিত হল সৃষ্টিকর্তা,দেব-দেবী এবং তাঁদের উপসনা করার জন্য উপসনালয়। মানুষ যখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল এবং বিভিন্ন সমাজ ও জাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ল তখন এই ভিন্ন-ভিন্ন সমাজ ও জাতির জন্য ভিন্ন-ভিন্ন সৃষ্টিকর্তা ও দেব-দেবীর আগমন ঘটল। একই সমাজ ও জাতিতে ধর্ম নিয়ে ভিন্ন-ভিন্ন মতপার্থক্য দেখা দিল। কেউ বলল সৃষ্টিকর্তা এক কেউ বলল না, অনেক। কেউ বলল সৃষ্টিকর্তা সাকার কেউ বলল নিরাকার।

এবার কিছু প্রাচীন ধর্ম সম্পর্কে জানা যাক। প্রাচীন ধর্ম শুধুই প্রাচীন – পৌরণিক নির্ভর। এদের মধ্যে একটি সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্ম। এই ধর্মের প্রধান তিনজন দেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিব। হিন্দু ধর্ম বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত। কোনো দল ব্রহ্মাকে পূজা করে তো কোনো দল বিষ্ণুকে।

পূর্বেই বলেছি ভিন্ন সমাজ ও জাতির জন্য ভিন্ন সৃষ্টিকর্তা বা দেব-দেবী রয়েছে ঠিক তেমনি হিন্দু ধর্মেও। বাংলায় যখন দশমীর দিন দেবী দূর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হয় ঠিক সেদিনই উত্তর ভারতে দুসেরা অর্থাৎ রাবণকে ধ্বংস করা হয়। কিন্তু বাংলায় সেদিন রাবণকে ধ্বংসের কোনো উৎসবই বাঙালীরা করেন না। ঠিক তেমনি উত্তর ভারতে বাঙালী ছাড়া কেউ দেবী দূর্গাকে বিসর্জন দেয় না। ওদিকে মহারাষ্ট্রে আবার খুব জাঁকজমকভাবে গণেশ পূজা করা হয় যা ভারতের অন্য কোথাও করা হয় না। । যদিও কালীপূজা সর্বভারতব্যাপী উৎযাপিত হয়।

পুর্বেই বলেছি একই সমাজ ও জাতিতে ধর্ম নিয়ে ভিন্ন-ভিন্ন মতপার্থক্য দেখা দিল ঠিক তেমনি হিন্দু ধর্মেও মতপার্থক্যর সৃষ্টি হল। কেউ কেউ এই কোটি-কোটি দেব-দেবীকে প্রত্যাখান করে এক-ঈশ্বরে বিশ্বাস করা শুরু করল। প্রবর্তিত হল আর্য ও ব্রাহ্ম সমাজের মত দল। হিন্দু ধর্মকে তারা বিবর্তিত করে একটি আধুনিক ধর্মে রুপান্তরের প্রয়াস হাতে নিল।

এবার আরেকটি প্রাচীন ধর্মের কথা বলি—গ্রীক ধর্ম। যে ধর্মের দেব-দেবতাগণ সবকিছু গিলে নেওয়ায় উপদেয় মনে করেন, সেটা নিজের সন্তানই হোক বা স্ত্রী। এ ধর্মের দেব-দেবীগণ বাস করেন অলিম্পাস পর্বতে। জিউস বজ্রের দেবতা,তিনিই এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা।দেবতা ক্রোনাস জিউসের পিতা। জিউস যখন তাঁর মা রেয়া-এর গর্ভে ছিলেন তখন ক্রোনাস আশঙ্কা করেন জিউস তাঁর উপর প্রভাব বিস্তার করবে, এজন্য ক্রোনাস সিদ্ধান্ত নেন,পূর্বে তাঁর ভূমিষ্ট সন্তানদের ন্যায় জিউসকেও গিলে ফেলবে। এ কথা রেয়া জানতে পেয়ে জিউস যখন ভূমিষ্ট হন তখন তাকে অন্যত্র লুকিয়ে রাখেন। জিউসের পরিবর্তে তিনি ক্রোনাসকে একটি পাথর কাপড়ে মুড়ে তাঁর হাতে দেন এবং ক্রোনাস সেটি গিলে ফেলেন। এ তো গেল জিউসের জন্মের ঘটনা এবার তাঁর কন্যা দেবী অ্যাথিনা-এর জন্মের ঘটনা বলি। অ্যাথিনা যখন তাঁর মায়ের গর্ভে ছিলেন তখন জিউস আশঙ্কা করেন অ্যাথিনা তাঁর উপর প্রভাব বিস্তার করবে। এজন্য তিনি তাঁর পিতার মত অ্যাথিনাকে গিলে না ফেলে গর্ভে থাকা অ্যাথিনাসহ তাঁর স্ত্রীকে গিলে ফেলেন। এর কিছুপরে জিউস তাঁর মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। তারপর জিউসের মাথা ফেটে বেরিয়ে আসেন পূর্ণ যুবতী দেবী অ্যাথিনা। এই কাহিনিগুলো সম্পূর্ণ পৌরণিক। বর্তমানে গ্রীক ধর্ম বিলুপ্ত।

আরেকটি পৌরণিক নির্ভর ধর্ম হচ্ছে – ইহুদি। ইহুদি ধর্মমতে পৃথিবীর প্রথম মানব হলেন আদম। আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। আদম যখন স্বর্গে বাস করছিলেন তখন তিনি একাকিত্ব বোধ করছিলেন, তাঁর একজন সঙ্গীর প্রয়োজন ছিল। তাই সৃষ্টিকর্তা আদমের জন্য একজন সঙ্গী সৃষ্টি করলেন, লিলীথ, যে একজন নারী ছিলেন । কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত বলিষ্ঠ এবং শক্তিশালী। সঙ্গমের সময় তাই সে আদমের নীচে শুতে রাজি হয়নি। আদম ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে ধর্ষনের চেষ্টা করলে সে মন্ত্র পড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর সৃষ্টিকর্তা আদমের জন্য আরেকজন সঙ্গী সৃষ্টি করা আরম্ভ করলেন। কিন্তু আদম সে প্রক্রিয়া দেখে ঘৃণাবোধ করলেন। ঈশ্বর এবার সৃষ্টি করলেন হাওয়াকে বা হবাকে। যে ছিলেন নারী, দূর্বল এবং অবলা। যাকে আদম খুব সহজেই বশ করতে পারতেন। ইহুদিরা এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী, তারা তাদের ঈশ্বরকে ইয়োভা বলে ডাকেন। তাদের ধর্মগ্রন্থের নাম তোরা। এটি ঈশ্বর কর্তৃক সিনাই উপতক্যায় মোসেস-এর নিকট অবতীর্ন হয়। দূর্ভাগ্যবশত এই ঐশ্বরিক গ্রন্থটি বর্তমানে বিলুপ্ত। কিন্তু ইহুদিদের বিশ্বাস এই গ্রন্থটি এখনও জেরুজালেমে লুপ্ত অবস্থায় আছে। বলা হয়ে থাকে তোরা গ্রন্থটি অনেক বড়।

এবার একটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মের কথা বলি – রেড ইন্ডিয়ানদের ধর্ম। তার আগে বলে নিই রেড ইন্ডিয়ান কারা। ক্রিস্টোফার কলম্বাস যখন বৃটিশ সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে ভারত আবিষ্কারের পথে বেরিয়ে পড়েন তখন তিনি ভূল করে আমেরিকা আবিষ্কার করে ফেলেন। তিনি আমেরিকাকে ভারত ভেবে ভূল করেন। তিনি উপস্থিত হন ক্যারিবীয়ানের এক দ্বীপে। সেই দ্বীপকে তিনি ভারত ভাবেন এবং ওই দ্বীপে বসবাসকারী মানুষের গায়ের বর্ণ লাল দেখে তাদের নামকরন করেন রেড ইন্ডিয়ান। রেড ইন্ডিয়ানদের ধর্ম বিশ্বাস ছিল এমন যে কোনো রেড ইন্ডিয়ান শিশু জন্মানোর সাতদিনের মধ্য কোনো এক ভোরে তাকে তাদের মন্দিরের প্রধান কক্ষে একটি গর্ত করে তার উপর ছাই রেখে শুয়ে দেওয়া হয়। কক্ষটির জানালা ও দরজা সমস্তই খোলা রাখা হয়। এরপর প্রতিদিন সেই কক্ষটিতে শিশুটির পরিবারের লোক এসে দেখে যায় এবং লক্ষ্য করে সেই ছাইয়ের উপর কোনো জীবের পায়ের চিহ্ন আছে কি-না। যদি কোনো জীবের পায়ের চিহ্ন পাওয়া যায় তবে ওই জীবকেই সারাজীবন দেবতা মেনে ও তার উপসনা করে যেতে হবে সেই শিশুকে। এই প্রক্রিয়াটি খুবই বিপদজ্জনক এবং শিশুটির প্রাণের শঙ্কা থাকে।

এবার একটি নিরীশ্বরবাদ ধর্মের কথা বলি – বৌদ্ধ ধর্ম। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ। যিনি একজন হিন্দু রাজা ছিলেন। তার আসল নাম সিদ্ধার্থ। জন্মের পর তার মা মারা যাওয়ায় তিনি তার সৎ মা গৌতমা-এর নিকট লালিত-পালিত হন। এজন্য তার নাম গৌতম হয়। গৌতম ছোটবেলা থেকেই একটু ভিন্ন ছিলেন। সংসারের প্রতি তাঁর মন ছিল না এজন্য তাঁর পিতা তাকে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন এবং তাকে সংসারী করার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহন করেন। কিন্তু গৌতমের মন বিশাল রাজপ্রাসাদের মধ্য থাকতে চাইত না। তিনি বাইরে যেতে চাইতেন। সমস্ত জেনে তাঁর পিতা তাকে বাইরে যেতে অনুমতি দিলেন। তিনি রাজ্যে প্রচুর আনন্দ ও আমোদের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু গৌতম বাইরে এসে দেখলেন মানুষ দুঃখে পীড়িত। তিনি দুঃখের কারণ অনুসন্ধান করতে লাগলেন। দুঃখের কারণ অনুসন্ধান করতে তিনি ২৯ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করেন। তিনি গভীর জঙ্গলে চলে যান এবং সকল দুঃখের কারণ ক্ষুধা মনে করে খাওয়া-দাওয়া ত্যাগ করেন। কিন্তু তাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তিনি একটি অশ্বথ গাছের নীচে বসে কঠোর তপস্যা করতে থাকেন। দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনার পর  তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন। যে গাছটির নীচে বসে তিনি সাধনা করেন তাকে বোধি গাছ বলা হয়। বৌদ্ধধর্মের লক্ষ্য হল তৃষ্ণা বা আসক্তি এবং অবিদ্যার ফলে উদ্ভূত দুঃখ নিরসন করা। 

এবার খ্রিস্টান ধর্মের কথা বলি। এ ধর্মের প্রবর্তক যীশু। যিনি একজন ইহুদি ধর্ম প্রচারক ছিলেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় কখনও খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করেননি। তিনি ক্রসবিদ্ধ হয়ে মারা গেলে তাঁর অনুসারীরা তাঁর দর্শনকে একটি নতুন ধর্মে প্রবর্তন করেন। যা ইহুদি ধর্ম থেকে বিবর্তিত। ইহুদি পুরাণকে তারা বিবর্তিত করে একটি নতুন ধর্মগ্রন্থ প্রবর্তন করেন। যীশুকে খ্রিস্টানদের অনেকেই ঈশ্বরের পুত্র মানেন। বর্তমান পৃথিবীতে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই ধর্মে বেশ কয়েকটি মতবাদ রয়েছে যেমন—ক্যাথলিক, অর্থোডক্স, প্রোটেসট্যান্ট, মরসানস্, রাস্তাফারি।  ক্যাথলিকদের কেন্দ্র ভ্যাটিকান এবং তাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তি হলেন পোপ। যীশুই ঈশ্বরের পুত্র এ বিশ্বাসই করে থাকেন তারা। কুমারি ম্যারিও তাদের নিকট পরম পূজনীয়। অর্থডক্সদের কেন্দ্র ইস্তানবুল। তবে তারা পৌত্তলিক নয়। তারা যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলে স্বীকার করেন না। তাদের কাছেও কুমারি ম্যারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। প্রোটেসট্যান্ট মতবাদের প্রবক্তা জার্মান নাগরিক মার্টিন লুথার। এশিয়ার খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ফিলিপাইন ও পূর্ব তিমুরে সবচেয়ে বেশি মরমানস্ মতবাদীদের বসবাস। রাস্তাফারি মতবাদের সৃষ্টি জ্যামাইকার আফ্রিকান পাদ্রিদের দ্বারা। এসকল ভিন্ন মতবাদী খ্রিস্টানদের জন্য রয়েছে ভিন্ন-ভিন্ন গির্জা। খ্রিস্টান হওয়া সত্বেও ভিন্ন মতবাদী হওয়ায় একে অপরের গির্জায় প্রবেশ নিষিদ্ধ। যেমন  ক্যাথলিকদের গির্জায় অন্য মতবাদের লোকজনের  প্রবেশ নিষিদ্ধ।

এবার বলি ইসলাম ধর্মের কথা। এটি একটি একেশ্বরবাদী আব্রাহিমো ধর্ম। এটি সর্বপরি খ্রিস্টান ধর্মের বিবর্তিত রূপ। এই ধর্ম মুসা ও যীশুকে মহাপুরুষ হিসেবে মানে। তাদের বিশ্বাস যীশু বা ঈসাকে ইহুদিরা ক্রসবিদ্ধ করে হত্যা করেনি । বরং তারা ঈসার মত দেখতে ভিন্ন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। ইসলাম পৌত্তলিকতাকে মারাত্বক পাপ হিসেবে দেখে। ইসলাম কয়েকটি মতবাদে বিভক্ত  যেমন—সুন্নি, শিয়া, কাদেয়ানী। সুন্নি মতবাদের মধ্যও কয়েকটি মতবাদ রয়েছে। শিয়ারা আবার মোট ২৩টি মতবাদে বিভক্ত সুন্নি ও শিয়াদের জন্য রয়েছে আলাদা মসজিদ।

এবার বলি শিখ ধর্মের কথা। এ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক। এটি একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। এঁর ধর্মগ্রন্থের নাম গ্রন্থসাহিব। এটি পাঠ করা হয় সঙ্গীতের আয়োজন করে। এটি একটি নব্য ধর্ম হওয়ায় এতে এখনও কোনো মতবাদের সৃষ্টি হয়নি।

 এবার আরেকটি নব্য ধর্মের কথা বলি—বাহাই ধর্ম। যে ধর্ম পূর্বের সকল মহাপুরুষগণকে স্বীকার করে এবং এটাও বিশ্বাস করে মহাপুরুষগণের পৃথিবীতে আসা-যাওয়া চিরন্তন। এ ধর্মের প্রবর্তক বাহাউল্লাহ। এ ধর্ম আরও বিশ্বাস করে বাহাউল্লাহর পরে ঠিক এক হাজার বছর পর পৃথিবীতে আরেকজন মহাপুরুষের আবির্ভাব হবে। এ ধর্মে এখনও কোনো মতবাদের সৃষ্টি হয়নি।

আরও কিছু ধর্ম আছে যেমন—জরথ্রুস্টু,ইয়াজিদি, জৈন, কনফুসিয়াস (দর্শন), শিন্তো, তাওবাদ । বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় চার হাজারের বেশি ধর্ম আছে এবং প্রতিনিয়তই তা বাড়ছে ও তা থেকে মতবাদের সৃষ্টি হচ্ছে।  

ধর্ম এই সমাজে আছে একমাত্র তাকে আদর্শিত করার জন্য। সমাজে বসাবসকারী সকল মানুষকে আদর্শিত করার জন্য। এই পৃথিবীকে পাপের রাজ্য থেকে পূণ্যের সাগরে ভাসানোর জন্যই ধর্মের জন্ম। ধর্ম শিক্ষা দেয় সমস্ত পাপ থেকে বিরত থাকার। ধর্ম শিক্ষা দেয় আদর্শ মানুষ হওয়ার, মানুষের পাশে থাকার, সৌহার্দ্য-সহানুভূতির। কিন্তু মানুষ ধর্মকে বিভক্ত  করে একে অপরের অনিষ্ঠে লেগে পড়েছে। আদর্শ মানুষ হওয়ার পরিবর্তে তারা নিকৃষ্ট মানুষে পরিনত হয়েছে। নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ দাবি করে দাঙ্গা বাঁধিয়েছে এবং বাঁধাচ্ছে। নিজেদের ধর্মে মতবাদ সৃষ্টি করে নিজেরাই সহিংসতার শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। ধর্মকে একটি কুসংস্কারে পরিনত করেছে। বস্তুত ধর্ম এখন একটি কুসংস্কারই। মানুষ যে উদ্দেশ্যে ধর্মের জন্ম দিয়েছে তা কখনই সফল হয়নি।

জাত-পাত, উঁচু-নিচু, বর্ণ বৈষম্য মানুষ সৃষ্টি করে যখন মানুষ সমাজে বাস করতে শুরু করে। জাত-পাত, উঁচু-নিচু, বর্ণ বৈষম্য চিরকাল একই থেকে যাবে কিন্তু ধর্মের সংখ্যা দিনদিন এই সমাজে বৃদ্ধি পাবে। ধর্মের সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাবে ততই তার অধিক মতবাদ দেখা যাবে। মানুষ স্বভাবতই দল নির্বাচন করে এবং কোনো না কোনো দলের অনুসারী হয়ে থাকে। ধর্ম বা মতবাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া অর্থ মানুষের বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যাওয়া। মানুষ যতই বিভক্ত হয়ে পড়বে ততই তারা নিজেদের মধ্যে কোন্দল-কলহ, সহিংসতা, হত্যায় জড়িয়ে পড়বে।

ধর্মকে বর্তমানে একটি কুসংস্কার বলা যেতে পারে। যেটি আজ সভ্য সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কুসংস্কারকে ত্যাগ করা অত্যাবশকীয় হয়ে পড়েছে। মানুষকে আদর্শে মানুষে পরিনত হওয়ার জন্য পুরাণের বানী পড়া আজ অনর্থক। মানুষ আজ চাঁদে পা রেখেছে কাল মঙ্গলে পা রাখবে। মানুষ সভ্য থেকে সভ্যতর হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। মানুষের চিন্তা বিকশিত হয়েছে আজ অথবা কালকের জন্য নয়—কয়েকশত কোটি বছরের জন্য যা শ্বাশত ও চিরন্তন। মানুষ আজ নিজেদের অস্তিত্বের কথা ভাবছে না, তারা পৃথিবীর কথাও ভাবছে। মানুষ আজ সৌরজগতের বাইরে গবেষণা করছে। সেখানে পরকাল নিয়ে ভাবা মানুষের জন্য সম্পূর্ণই বেমানান।

ধর্মের খোলস ছেড়ে মানুষ যখন বেরিয়ে আসবে তখনই পৃথিবী স্বর্গে পরিনত হবে । 


০৬-০৮-২০২০
নিউ মার্কেট, যশোর ।






























ট্যাগ:

জীবনবোধের কবিতা ☆  দেশাত্মবোধক কবিতা ☆  ধর্মীয় চেতনার কবিতা ☆ প্রকৃতির কবিতা ☆ প্রতিবাদী কবিতা ☆ প্রেমের কবিতা ☆ বিবিধ কবিতা বিরহের কবিতা ☆ মানবতাবাদী কবিতা ☆ রূপক কবিতা ☆  রম্য কবিতা ☆  শিশুতোষ ছড়া-কবিতা ☆ চতুর্দশপদী কবিতা☆ সনেট কবিতা ☆ মহাকাব্য ☆ ছন্দবৃত্ত কবিতা ☆ মাত্রাবৃত্ত কবিতা ☆ অক্ষরবৃত্ত কবিতা ☆ পদ্য-গদ্য ☆ গল্প ☆ সাহিত্য☆ উপন্যাস ☆ বিখ্যাত কবিতা ☆ ছোট কবিতা ☆ নতুন কবিতা ☆ ভালো বাংলা কবিতা ☆ আনকমন কবিতা ☆ বিরহের কবিতা ☆ কবিতা বাংলা ☆ জীবনমুখী কবিতা ☆ উপন্যাস কি ☆ আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ☆ উপন্যাস কত প্রকার ☆ বাংলা উপন্যাসের ইতিহাস ☆ জনপ্রিয় উপন্যাস ☆ বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও বিকাশ ☆ ঐতিহাসিক উপন্যাস ☆ বাংলা উপন্যাসের ধারা ☆ শিক্ষনীয় গল্প ☆ হাসির গল্প ☆ বাংলা গল্প ☆ গল্প  রোমান্টিক ☆ জীবনের গল্প ☆ ভালো গল্প ☆ ছোট গল্প ☆ ডাইনি গল্প


1 মন্তব্যসমূহ

  1. কয়েকটি নতুন তথ্য জানলাম। ধর্ম সম্পর্কিত এমন তথ্য আরও জানতে চাই। ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন