বেঞ্জামিন পর্ব-২.২

মোবায়দুল সাগর

ঘরে ফ্যান চলা সত্বেও আমার শরীর ঘামছে। আমি স্বপ্ন দেখছি। বাবা এবং আমি; আমাদের বাগানে বসে দাবা খেলছি। খুব টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কে আগে চাল দেয় কে আগে চাল দেয় অবস্থা। কিন্তু এক বিকট চিৎকারের কারণে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমার মায়ের গলা। প্রতিদিন এই বাড়িতে এমন চিৎকার চেঁচামেচি বা ঝগড়া ঝাটি হয়। যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ব্যাপারটা। আমারও অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানায় ওঠে বসলাম। তারপর প্রতিদিনের মত বাগানে হাঁটতে গেলাম। বাগানে নতুন এক ফুল ফুটে আছে লক্ষ্য করলাম। সজিবের মায়ের থেকে আক্কাচ চাচা, দুইটি অ্যাভোকাডোর গাছ নিয়ে বাগানের উত্তর পাশে একটি এবং অপরটি দক্ষিণ পাশে‌ লাগিয়েছিলেন। বাগানের দক্ষিণ পাশে যেখানে অ্যাভাকাডো গাছটা লাগানো হয়েছে, তার ঠিক পাশে অদ্ভুদ এই ফুলের গাছ। 

বাগানের মালি জসিম ভাই; তাকে বাগানে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, 'অ্যাভোকাডো গাছটার পাশে,অই গাছটার নাম কি?'

জসিম ভাই লোকটা মাধ্যমিক পাস করা এক হাসি খুশি যুবক। তার সাথে আমার বিশেষ কোনো খাতির নেই‌। লোকটা একটু গম্ভীর ধরণের। কথাবার্তা খুব কম বলেন। তবে যা করতে বলা হয় তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। তার বাড়ি খুব সম্ভবত যশোরে। তিনি এই বাড়িতে মালির চাকরি পেয়ে খুব খুশি। মাঝে মাঝে সেই খুশিতে তাকে তুর্কি নৃত্যের মত নাচতে দেখা যায়। বাগানটাকে সে নিজের থেকেও বড্ড বেশি যত্ন করে। যদিও আমার অথবা বাবা-মায়ের বাগান নিয়ে একবিন্দুও পরিকল্পনা নেই‌।‌ এসব আক্কাচ চাচায় করেন। 

"ভাইজান, এই ফুলটির নাম ক্যানাঙ্গা! কিছুদিন আগে আক্কাচ ভাই, তার এক পরিচিত নার্সারি থেকে এই ফুলের গাছটি নিয়ে এসেছিলেন।"

গাছটির দিকে এগিয়ে যেতেই অদ্ভুত এই ফুলের সুগন্ধে কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম। সত্যি, বড়ই অদ্ভুত ফুল! গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। পাতাগুলো ঘন সবুজ; একটা শাখা থেকে প্রায় পাঁচ-সাতটা প্রশাখা বেরিয়েছে। যার সবকয়টা ঘন সবুজ পাতায় ছেয়ে আছে। যার কারনে গাছটার ডালপালা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে না। প্রশাখা গুলোয় ফুটে আছে,'ক্যানাঙ্গা' নামের বিশেষ এই ফুল। গাছটায় কাঁচা-পাকা দুই ধরণের ফুলই রয়েছে। কাঁচা ফুলে এক গন্ধ এবং পাকা ফুলে আরেক গন্ধ। রহস্যের ছড়াছড়ি গাছটায়। কাঁচা ফুলের সবকিছু অর্থাৎ পুষ্পদন্ড, বৃন্ত, পাপড়ি হালকা সবুজ কিন্তু পাকা ফুলের সব কিছুই গাঢ় হলুদ; অনেকটা পাকা কলার রঙের মত। বৃন্ত থেকে আলাদা হয়ে পড়েছে পাপড়ি গুলো; যেন ছয় থেকে সাত ইঞ্চির কোনো দানবের আঙ্গুল নিচু হয়ে ঝুলছে। ফুলটা সাধারণ কাউকে আকর্ষণ করবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে এর সুগন্ধের প্রেমে পড়তে সবাই বাধ্য।

বাগানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর ছাদে গেলাম। ছাদে পায়চারি করতে করতে নিজ মনে দাদার লেখা একটি কবিতার অংশ আবৃত্তি করতে লাগলাম - 

'নেই কোথাও পাখ-পাখালির গুঞ্জন,
মাটিতে মিশে গেছে আমার এই কুঞ্জন 
ধরার চোখে নতুন রঙ; কালো অঞ্জন,
নেই কোথাও জট,নেই কোথাও নির্জন!' 

সত্যি কোথাও পাখ-পাখালির গুনগুন শব্দ আর শুনতে পাওয়া যায় না। পৃথিবী ভয়ংকরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মানুষের উদ্ভট বিশৃঙ্খলা এর জন্য দায়ী।‌ তাই তো মানুষের সাফল্য মিশে গেছে মাটিতে। তবে একদিন পৃথিবী তার চোখে নতুন আলো দেখবে। তখন তার চোখ থাকবে, বঙ্গললনার দুটি চোখে আঁকা কাজল কালোর মত। তখন পৃথিবীতে আর কোনো বিশৃঙ্খলা থাকবে না। সব সময় মুখরিত থাকবে পাখিদের কলরবে। 

সজীবদের ছাদে কাউকে দেখছি না। প্রতিদিন প্রভাতফেরীতে ওদের পারিবারিকভাবে ছাদে আসার একটা নিয়ম আছে। আজ তার ব্যতিক্রম দেখছি। ওরা কি বাড়িতে নেই? সিঁথিকে ডাক্তার দেখাতে আবার কোথাও নিয়ে গেল না-কি? আমি নিচে নেমে এসে দেখি এই সাত সকালে মা টিভি দেখছেন। টিএলসি চ্যানেলে রান্নার অনুষ্ঠান। আমার মা এখন একজন মানসিক রোগী। অনেক দেশে অনেক হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়েছে। ছয়-সাত মাস আগে মায়ের সাথে চেন্নাইয়ের গ্লোবাল হসপিটালের সাইকিয়াট্রিস্ট এন.বি নারায়নমুর্তির অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। মায়ের সাথে আমি এবং আমার এক দুঃসম্পর্কের খালা গিয়েছিলেন। লঙ্কার খুব কাছে গিয়ে অর্থাৎ চেন্নাইয়ে মা, আমাকে নিয়ে এক লঙ্কা কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। অবশ্যি কাণ্ড বাঁধিয়ে ছিলাম আমি। 

আমরা যে হোটেলটিতে উঠেছিলাম তার সন্নিকটে এক বই মেলা বসেছিল। আমি কখনো ভারতীয় মেলা দেখেনি। তাছাড়া এটা দক্ষিণ ভারতীয় মেলা, দ্রাবিড় জাতিগোষ্ঠীর। যাদেরকে নিয়ে আমার কৌতুহল একটু বেশি। ভারতের নিকৃষ্ট জাতি হচ্ছে আর্য জাত থেকে উদ্ভব জাতিগোষ্ঠীগুলো। একমাত্র অনার্য জাতি ভারতের সর্বোত্তম জাতি। আমরা উঠেছিলাম চেন্নাইয়ের, গিন্দির, আইটিসি গ্রান্ড চোলা হোটেলে। তার পাশের এলাকার নাম নন্দনম। মাঝখানে একটি ছোট নদী বয়ে গেছে। নন্দনমের ওয়াইএমসিএ কলেজ অব ফিজিকাল এডুকেশন মাঠে বসেছিল মেলাটা। 

বিকাল হতেই মাকে বললাম, 'মা, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। পাশেই বই মেলা বসেছে। সেখান থেকে ঘুরে আসি।' 

'আচ্ছা যা, দেরি করবি না একদমই!' 

রাস্তায় নেমে একটা ট্যাক্সিতে উঠলাম। ট্যাক্সি কিছুক্ষণের মধ্যেই মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হ'ল। হোটেল থেকে যার দূরত্ব ছয় কিলোমিটারের একটু বেশি। মেলায় প্রবেশের কয়েকটি পথ রয়েছে, তবে আমি যে প্রবেশ পথটি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম, তার তোরণটি করা হয়েছে সবুজ রঙের। তাতে লেখা ৪২তম চেন্নাই বুক ফেয়ার। তোরণের পাশে একটি সোনালি রঙের মূর্তি দেখলাম। কিন্তু মূর্তিটি কার চিনতে পারলাম না; কাউকে জিজ্ঞাসা করলে হত। ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে, মেলায় কতগুলো দোকান বসেছে, কোন দোকান কত নম্বরে ইত্যাদি। মোট ৭৫০টা দোকান বসেছিল। ডেকোরেশন বেশ ভালো। আমি ভিতরটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। সেখানে তামিলদের মাঝে আমিই একমাত্র বঙ্গসন্তান। ওদের চেহারা এবং শারীরিক গঠন আমাকে আলাদা করছে। প্রত্যেক দোকানে তামিল বই। কাজেই আমি সেগুলোতে আকর্ষণ বোধ করলাম না। আমি একটি বই খুঁজছিলাম তামিল নাড়ুর বিখ্যাত লেখক আর.কে নায়রণের 'ব্যাচেলর অব আর্টস্'। এত বিখ্যাত বই খুজতে আমার ১৬৬টি দোকান ঘুরতে হ'ল। বইটি কিনে নিয়ে আরো কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। 

‌ শীতকালের বেলা এমনিতেই ছোট হয়। আমি পাঁচটার দিকে মেলা থেকে বের হলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম হোটেল পর্যন্ত হেঁটে যাবো। রাস্তায় নেমে আসতেই দেখি আকাশে ঘন কালো মেঘ। এই শীতকালে আকাশ ফুটো করে বৃষ্টি নামবে কি-না কে জানে। আমি সিগারেটের দোকান খুঁজতে লাগলাম। প্রচন্ড রকমের সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছিল। একজনের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, 'সিগারেট কোথায় পাওয়া যাবে?' তিনি হাত দিয়ে একটি জরাজীর্ণ গলি দেখিয়ে দিলেন। আমি সেই গলিতে প্রবেশ করে দেখি একটি দোকান। সেখান থেকে এক প্যাকেট গোল্ড ফ্লেক কিনলাম‌।‌ একটা ধরিয়ে শুকটান দিতে দিতে গলির ভিতরে গেলাম। গলিটা হঠাৎ ফাঁকা হয়ে গেল। ছোটখাটো একটা মাঠ। বলতে বলতে চেন্নাইয়ে নামল মুষলধারে মাঘে বৃষ্টি। আমি আশ্রয় নিলাম মাঠের একটি ঝুপড়ি ঘরে। বৃষ্টি যেন আরো জোরে চেপে বসল। ঝুপড়ি ঘরটায় পানির ছাঁট আসছে। তবে একটা জিনিস এখানে লক্ষ্য করলাম, বাংলার সেই চিরচেনা বৃষ্টি আর এখানের বৃষ্টির মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য। যদিও চেন্নাই বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। 

ঝুপড়ি ঘর থেকে বড় রাস্তায় যেতে হলে আমাকে ভিজতে হবে। আমার সাথে থাকা বইটাও ভিজে চপচপ করবে। বিধায় আমি ঝুপড়ি ঘরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম‌। আরো তিনটি সিগারেট শেষ করলাম। প্রায় দেড় ঘন্টা পর বৃষ্টির গতিবেগ কিছুটা কমলে আমি এক দৌড়ে একটা ট্যাক্সিতে উঠে পড়লাম। হোটেলে ফিরে দেখি রিসিপসনে মা এবং খালা, কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাথে উদ্বিগ্ন হয়ে কথা বলছেন। 

'মা, কি হয়েছে? পুলিশ কেন?' 

মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, 'বেনু কোথায় ছিলি তুই? আমরা সারা এলাকা তোকে খুঁজছি। নতুন জায়গা কিছুই চিনি না। আর তুই কোথায় গেছিলে। ফোনে তোর সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। ফোন বন্ধ বলছে। শেষে উপায় না পেয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছি। তোর ফোন কোথায়?' 

আমি পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি ফোন সুইচ অফ। 

পাশে দাঁড়ানো কর্মরত পুলিশ অফিসার মাকে ইংরেজিতে বললেন, 'এ আপনার ছেলে? আপনি তো বলছিলেন ছোট বাচ্চা। এমন টগবগে তরুণ হারিয়ে যাবে এটা কল্পনা করা যায়?'

মায়ের মনে আসলে কোন রোগ গেঁথে গেছে সেটা স্পষ্ট নয়। উনি মাঝে মাঝে নিজের মনে গুনগুন করে গান গাইতে থাকেন। কিন্তু সেই গানের কোনো মানে নেই। মাঝে মাঝে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, 'আর বেশিদিন নয়, আর বেশিদিন নয়!' আমি মায়ের পায়ে কাছে গিয়ে বসলাম। রেক্সনাকে বললাম- 

'তুমি কি আমার জন্য এক কাপ চা আনতে পারবে?'

রেক্সনা মাথা নেড়ে বলল,'জ্বী,ভাইজান।' 


মায়ের কোলে মাথা রেখে বললাম, 'মা, তোমার কি হয়েছে বলো তো? এই সকালে টিভিতে কেক বানানো শিখছো?'

'ওমা, তোর ছেলে-মেয়েকে বিভিন্ন আইটেমের কেক বানিয়ে খাওয়াতে হবে না! নাহলে, ওরা বলবে- দিদা কেক বানাতে জানে না। দিদা পঁচা!'

'তুমি এমন সব অদ্ভুত কথা কোথায় পাও? আর আমার ছেলে-মেয়েই বা আসলো কোথা থেকে?' 

'তুই বড্ডো বড় হয়ে গেছিস রে বেনু!'

'মায়ের কাছে ছেলেরা কখনো বড় হয় না; আমি তোমার সেই ছোট্ট বেনুই রয়েছি।' 

মা এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, 'আর বেশিদিন নয়, আর বেশি দিন নয়!' তিনি আবার টিভির দিকে মনোযোগ দিলেন! রেক্সনা চা নিয়ে এসে বলল,'ভাই, চা।' 
‌ 
‌'টেবিলে রেখে দাও।'

আমি ওখান থেকে উঠতেই, মা বললেন, 'বেনু, চা টা খেয়ে যা।'

'না! এখন চা খাবো না।'

তনিমার কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।‌ বাড়ি থেকে নেমেই ক্যানাঙ্গা নামের সেই অদ্ভুত ফুলের দিকে চোখ গেল। আমি তিনটি ফুল ছিড়ে নিলাম। কলেজে 'মার্সিডিজ-বেঞ্জ এর সিএলএ-ক্লাস' গাড়িতে চড়ে যাচ্ছি। দুইমাস আগে গাড়িটি, বাবা, জার্মানি থেকে ইমপোর্ট করে নিয়ে এসেছেন। দুইমাস আগে আমার জন্মদিন ছিল। এটা হয়ত আমার জন্মদিনের উপহার । একুশ তম জন্মদিন। আমার প্রথম থেকে বার তম জন্মদিন পালন করা হয়েছিল জাঁকজমক ভাবে। তবে তারপর থেকে জন্মদিন উৎযাপন স্থগিত রয়েছে। সবচেয়ে স্মরনীয় জন্মদিন পার্টি ছিল 'দশম জন্মবার্ষিকী'! 

কলেজে ইচ্ছা করেই ত্রিশ মিনিট দেরি করে গিয়েছি। দেরিতে কলেজে গেলে মনে হয়, কলেজ একটা মরুভূমি।‌ সবাই তখন ক্লাসে ব্যস্ত থাকে। চারিদিকে শোনশান অবস্থা বিরাজ করে। দেখে মনে হয় কলেজের বিশেষ কেউ মারা গেছেন, যার জন্য শোক পালন করা হচ্ছে। তনিমার, ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তখন ওদের ইংরেজি প্রথম পত্রের ক্লাস চলছে। ক্লাস টিচার জনাব কবিরুল জোয়ার্দার।‌ একজন দানব প্রকৃতির মানুষ।‌ তার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক আছে বলতে হয়। তিনি মনে করেন তার চিন্তাধারা এবং আমার চিন্তাধারা এক। এইতো বেশ কয়েকদিন আগে আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, 'আচ্ছা, বেঞ্জামিন, তুমি একজন স্টাইল সচেতন মানুষ হয়ে; হালের ফ্যাশন কেন বহন করছো?' 

আমি তাকে বেশ রহস্যের সাথে বললাম, 'আপনি কখনো দড়ি ছাড়া গরু দেখেছেন? যে গরু ফসলের অনিষ্ট করে, সেই গরু আবার খোয়াড়ে বাঁধা পড়ে। এই দড়ি ছাড়া গরু হচ্ছে ফ্যাশন, যা স্টাইলকে অনিষ্ট করে চলেছে যুগের পর যুগ। আবার এই ফ্যাশন খোয়াড়ের মত বাধা পড়েছে স্টাইলের কাছে। অর্থাৎ স্টাইলেরও ক্ষতি হচ্ছে এবং ফ্যাশনেরও ক্ষতি হচ্ছে। একটা সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে চলেছে। স্টাইল এবং ফ্য়াশন। আর হ্যাঁ, আমি স্টাইল বা ফ্যাশন প্রিয় নই।' 

স্যার আমার কথা শুনে বেশ হতভম্ব হয়ে বললেন তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছো, স্টাইল বা ফ্যাশন গুরুত্বপূর্ণ না?' তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কী? 

‌‌আমি তাকে এবার মশকরা করার ভঙ্গিতে বললাম, 'আপনি যে নিজেকে একজন ইংরেজি পন্ডিত মনে করেন আসলে আপনি কিন্তু তা নন। আপনার টান রয়েছে বাংলার প্রতি। আপনি হলেন সেই দড়ি ছাড়া গরু। আপনি ইংরেজিকেও অনিষ্ট করছেন সাথে বাংলাকেও।'

আমাকে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, স্যার বললেন, 'কি ব্যাপার বেঞ্জামিন? কিছু কি চাই?' 

‌‌'না, স্যার কিছু চাই না। আপনার ক্লাস দেখতে আসলাম।' 

‌‌'ও, আচ্ছা! ভিতরে এসে বসো।' 

এর মাঝেই ঘণ্টা পড়ে গেল। স্যার ক্লাসে এক বিন্দু না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেলেন‌ তার, দ্বিতীয় ক্লাসের উদ্দেশ্য। 

তনিমাকে হাত ধরে টেনে ক্লাস থেকে নিয়ে আসলাম। ও একদম নিশ্চুপ ছিল। ওর প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারছিলাম না।‌ ওর পা দুটো সামনে এগিয়ে ছিল। অর্থাৎ ও আমার সাথে যেতে রাজি। ওকে গাড়িতে বসিয়ে খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চললাম। ক্যানাঙ্গা ফুলগুলো ওর হাতে দিয়ে বললাম, 'খুব অদ্ভুত ফুল, তাই না?' 

‌ ও বিড়বিড় করে বলল, 'আপনার থেকে তো আর বেশি নয়?' 

ও ফুলের পাপড়িতে আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিচ্ছিল। আমি সেই দৃশ্য দেখে হঠাৎ ইউরেকা(!) বলে গাড়িতে এক শক্ত ব্রেক কষলাম। "দেখেছি! দেখেছি! আমি ফুলটা তো এর আগেও দেখেছি, মালয়েশিয়াতে।‌ ওখানে এক পার্কে এই ফুল দেখেছিলাম। কিন্তু এর নাম ছিল খুব সম্ভবত ইলাং ইলাং।"

তনিমা একটু মুখ ভেঙচি দিয়ে মৃদুস্বরে বলল, 'ভাবা যায় ব্যাপারটা!' 

'কেন? কি ভাবা যায় না?'

'এই ফুল দেখতে না-কি মানুষের যেতে হয় মালয়েশিয়া। অথচ নিজের দেশের বলধা গার্ডেনে এই ফুল যে দিব্যি রয়েছে, তা যদি জানত।' 

'তুমি এর আগে এই ফুল দেখেছো?' 

'জ্বী, জনাব‌।‌ এই ফুলের নাম ক্যানাঙ্গা।‌ ক্রান্তীয় জলবায়ু বেষ্টিত দেশগুলোতে এই ফুল পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে পাওয়া যায় একমাত্র বলধা গার্ডেনে। কিন্তু আপনি কোথায় পেয়েছেন?'

আমি দাঁতে দাঁত চেপে লজ্জার সাথে তনিমার দিকে তাকিয়ে আছি‌।‌ হঠাৎ তনিমাকে বলে বসলাম, 'গাড়ি চালানো শিখবে না-কি?' 

ও আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন ওর চোখ দিয়ে অগ্নুৎপাতের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ল।‌ আমি এক ঢোক গিলে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করলাম। আমি খেয়াল করলাম ও আজ একটু সেজেছে।‌ চুলটা আগে যেভাবে বাঁধত সেভাবে আজ বাঁধিনি। চুল একপ্রকার খোলা বলা যেতে পারে।‌ আমি জানালা খুলে দিতেই এক দমকা হাওয়া ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দিল। ওর ফর্সা চিবুকে চুলগুলো সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়ল। ও এলোমেলো চুল ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। আমি ওর ব্যস্ততা দেখতে দেখতে কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম অথচ এদিকে আমি গাড়ি চালাচ্ছি সে খেয়াল নেই। আমি ওর সৌন্দর্যের পূজারী হতে পারি তবে এভাবে ওকে দেখা আমার কাছে অন্যায় মনে হচ্ছে। এভাবে ওর সৌন্দর্য উপভোগ করার কোনো অধিকার আমার নেই। 

বহতামান নদীর তীরে বিস্তৃর্ণ এক ফাঁকা মাঠ।‌ আর কিছুদিন পর এই মাঠে কাশফুলে ছেয়ে যাবে।‌ অনেকেই এই জায়গাকে বলে প্রেম কর্নার। কেননা এখানে হরহামেশায় প্রেমিক যুগল দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই জায়গাটা জুন্নাপুর-কেসুন্দার অংশের মধ্যে পড়েছে। রোদ ঝলমল করছে। কড়া রোদ -খুব গরমও পড়ছে। নদীর তীরে একটি আম গাছের নিচে আমরা দুজন দাঁড়িয়ে আছি- 

আচ্ছা তনিমা,'তোমার কী মনে হয় প্রকৃতি অতি নিষ্ঠুর?'

'প্রকৃতি শুধু আপনার মত মানুষের সাথেই নিষ্ঠুরতা করে।'

'আমার কাছে ধন-সম্পদ, ভোগ-বিলাসের কোনো অভাব নেই। অভাব শুধু একটাই সুখের। প্রকৃতি হয়ত আমাকে অনেক ধন-সম্পদ দিয়েছে তবে আমাকে সুখ দেননি‌। কিন্তু একজন দরিদ্র কৃষক অথবা একজন শ্রমজীবী মানুষকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি কী সুখি? এর উত্তরে তিনি হেসে বলবেন অবশ্যই সুখি। আচ্ছা তোমার কি মনে হয় সুখ জিনিসটা আসলে কি?'

'এইযে আপনি আমাকে জোর করে এখানে এনেছেন এটাই তো উৎকৃষ্ট সুখের উদাহরণ। আমি সুখের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি!' 

'ঠাট্টা করছো কেন? আমি তো তোমাকে .......?'

'আমি তো তোমাকে কী?'

আমি তো তোমাকে.......(?) এখানে কোন শব্দটি ব্যবহার করলে বাক্যটি পরিপূর্ণ হত। নিশ্চয়ই ভালোবাসি। একজন অসুখি ব্যক্তি কি একজনকে ভালোবাসতে পারে‌। ভালোবাসতেও তো সুখের প্রয়োজন। কোনো দুঃখি ব্যক্তি কখনো ভালোবাসতে জানে না। সে সর্বত্র সুখ খুঁজে বেড়ায়।‌

'তনিমা, আমি কি তোমার হাতটা ধরতে পারি?'

'মেয়ে মানুষের হাত ধরতে খুব ভালো লাগে তাই না?' 

'আহা, ব্যাপারটা তেমন কিছুই না! তুমি হাতটা দাও।' 

‌‌ও এমন একটা ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে দিল যেন ওর ইচ্ছায় নেই। অথচ ওর চোখ অন্য কথা বলছে। 

আমি ওর হাতটা ধরে বললাম,' আমার চোখের দিকে তাকাও।' 

ও আমার চোখের দিকে তাকালে বললাম, 'কি দেখতে পাচ্ছো?' 

কিছুক্ষণ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ ও আমার হাত ছেড়ে দিয়ে পিছে ছিটকে পড়ল। যেন ও কয়েকশ' ভোল্টের বিদ্যুৎ-এর ঝটকা খেয়েছে। ওর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গিয়েছে। চোখ কিছুটা বড় হয়ে এসেছে।‌ 

আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বললাম, 'কি হয়েছে? চোখে কি এমন দেখলে যে আমার হাত ছেড়ে দিলে।'

‌ 'আমি এখুনি কলেজে যাবো; আমাকে দয়া করে কলেজে দিয়ে আসেন।' 

তনিমাকে কলেজে ছেড়ে রাবড়িতলায় এসেছি। গাড়িটাকে মৃদুল চাচার কাছে দিয়ে বলেছি, 'বাড়িতে রেখে আসো।' আমি ওখান থেকে হেঁটে এসেছি। ছোট্ট এক ঝুপড়ি চায়ের দোকানে আমি, আমিনুল এবং রাব্বি বসে সিগারেট টানছি। দোকানের মালিক লাবু কাকা। তিনি শুধু দোকানের মালিকই না সেইসাথে বিশাল এক ভুড়ির মালিকও।‌ লাবু কাকার ভুড়ি দেখার মত। তবে রহমত ভাইয়ের সাথে লাবু কাকার কোনো মিল নেই। লাবু কাকা রহমত ভাইয়ের মত গান পাগলা নন। সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আমরা তার দোকানে গেলে একটা কথায় বলেন, 'ভাইর বিটারা ক্যামন আছো?' তার বেশি একটি কথাও বলেন না। তবে তার এখানে আসার কারণ হল আমরা যদি এখানে রাত-দিন চব্বিশ ঘন্টা বসে থাকি তিনি এক বিন্দুও বিরক্ত হবেন না বা বলবেন না তোমরা এখানে অযথা বসে আছো কেন? 

আমাদের পাশে চার-পাঁচ জন মধ্যবয়সী লোক গল্প করছে। তাদের গল্পের বিষয় দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে। কোলাব্যাঙের মত দেখতে এক লোক পান চাবাচ্ছে আর বলছে, "দেশ তো রসাতলে গেছে সেই ২০০৮ সালেই। কত মানুষ গুম হয়েছে তার হিসাব আছে।‌ চুরি ডাকাতি তো নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এদিকে গতবছর- বলার আগেই এক শুঁটকো বেঁটে টাইপের লোক বলে উঠলেন, "দেশের উন্নয়ন তো তোমার চোখে পড়বে না হে। দেশ কত এগিয়েছে তুমি জানো কিছু?"

এই দুইজন লোক দেশের দুই রাজনৈতিক দলের অনুসারী তা বুঝতে পারলাম। কিছুক্ষণ এমন তর্ক বিতর্ক করে তারা এখন জিয়া নামে এক ব্যক্তির খুব কড়াভাবে সমালোচনা করছেন। টুপি পরিহিত এক দাঁড়িওয়ালা হুজুর টাইপের লোক একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, "খোদার ভয় ভীতি যাদের নাই তাদের দ্বারা পৃথিবীর যত অকাম-কুকাম আছে সবই সম্ভব। টাকার লোভে মানুষ যে ইসলাম ছেড়ে খ্রিষ্টান হতে পারে তা আমার চিন্তা শক্তির বাইরে। শুনেছি এবছর নাকি ঐ নাফরমানটা হজ্জে যাবে। কত বড় বজ্জাত দেশে মুসলমান আর আমেরিকায় খ্রিষ্টান।"

আমার মনে হয় যারা কাবা শরীফ তাওয়াফ করতে যান তাদের বেশিরভাগই অবৈধ সম্পদের মালিক। আল্লাহ্ ধন-সম্পদ দিয়েছেন যতসব অসৎ মানুষদের। সৎ মানুষগুলোই থেকে গেছে গরীব হয়ে। তাদের কখনো আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার সৌভাগ্য হয় না। বাবা-মা এবং আমি দুইবার কাবা শরীফ তাওয়াফ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমার বাবার এই সম্পদ কি বৈধ?

চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে নীলসাগর এর দিকে আমরা হেঁটে যাচ্ছি। আমিনুল তার প্রেমিকার বন্দনায় মেতে আছে। রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টায় ফোনে ওদের গুটুর গুটুর প্রেম চলে। নীলসাগরের পশ্চিম মোড়ে একটা আর্ট স্কুল আছে। কলেজ শেষ করে তনিমা সেখানে ছবি আঁকা শিখতে আসে। আর্ট স্কুলের পাশেই, "আনন্দ শ্রুতি বিদ্যা নিকেতন" সেখানে আমিনুলের প্রেমিকা রিনি গান শিখতে আসে। আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য এক ঢিলে দুই পাখি মারা।

সুলতান আর্ট স্কুলের সামনে ফুটপাতে চায়ের পসরার এক বেঞ্চে আমরা বসে আছি। হঠাৎ আমাদের পাসে বসা আমার বয়সী এক ছেলে আমার কনভার্সের উপর বমি করে দিয়েছে। বিভৎস ব্যাপার। আমার বয়সী এক ছেলের হঠাৎ বমি করার কারণ কি হতে পারে? আমিনুল এবং রাব্বি ঐ ছেলের কান্ড দেখে আকাশ সমান লাফিয়ে উঠেছে। খুব গালাগালিও করছে ওরা। আমি ওদেরকে থামতে বললাম। সে ছেলে একেবারেই নিশ্চুপ। বারবার পানি কুলি করছে আর মাথায় পানি দিচ্ছে। আমার জুতায় এক মগ পানি ঢেলে দিয়ে বলল, "ভাই সরি। গায়েত্রীগাঁও থেকে বাসে করে নতুন বাজার যাচ্ছিলাম। বাসের ভিতর বমি বমি ভাব চলে আসায় এখানে নেমে পড়ি। নেমেও বমি বমি ভাবটা যায়নি। তারপর দেখলেনই তো।" আমি আর কিছু বললাম না। আমি জানতাম গাড়িতে চড়ার কারণে শুধু মেয়েদের বমি হয় কিন্তু আজ তা ভূল প্রমানিত হল। জুতা জোড়া খুলে রেখে খালি পা নিয়ে বসে বসে সিগারেট টানতে লাগলাম। 

‌‌ সুলতান আর্ট‌ স্কুলের গেটের সামনে তনিমা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।‌ হঠাৎ কোথা থেকে উড়ে এসে ওর সামনে ওর বুয়েটিয়ান ভাই উপস্থিত। আমি তাও এগিয়ে গেলাম।গিয়ে ওর ভাইকে বললাম, "যদি কিছুনা না মনে করেন তাহলে একটা কথা বলতে পারি!" ওর ভাই কিছুটা ভ্রু কুঁচকে আমার নিচু থেকে উপর পর্যন্ত দেখে বললেন, "জ্বী বলেন" আমি বললাম, "আপনার সাথে যে মেয়েটি রয়েছেন তিনি অসম্ভব সুন্দরী!" তনিমার বুয়েটিয়ান ভাই আমার এমন বক্তব্য শুনে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। তার ভ্রু যতটুকু কুঁচকে ছিল ততটুকু কুঁচকে আছে। তারপর একটা রিকশা ডাকলেন। দুইজনে উঠলেন এবং বেরিয়ে পড়লেন। আমি খুবই অবাক হলাম। আমি আশা করেছিলাম এমন কথা বলাতে হয়ত আমাকে এক বড় সড় চড় খেতে হবে। কিন্তু তেমন কিছুই হল না। আমি ওখান থেকে আসতেই আমার পায়ে কি যেন বিধলো। নিচে তাকিয়ে দেখি আমার পা দুটি নগ্ন। আমি খালি পায়ে। এখন সব পরিষ্কার হয়ে গেল। তনিমার ভাই আমাকে নিতান্তই একজন পাগল মনে করেছেন। কারণ খালি পায়ে তো আর কোনো সুস্থ সবল মানুষ থাকে না। 

জুতা মানুষের অবস্থান জানান দেয়। যদি কারো পায়ে ছেড়া বা সেলাই করা চপ্পল থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর। যদি কারো পায়ে নতুন বা পুরাতন চপ্পল থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে মধ্যবিত্ত। যদি কারো পায়ে চকচকে লেদারের জুতা থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে উচ্চবিত্ত পরিবারের। যদি কারো পায়ে খড়ম থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে সাধু সন্ন্যাসী শ্রেণীর। আর যদি কারো পা দুটো খালি থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে পাগল শ্রেণীর না হয় মহাপুরুষ শ্রেণীর। মধ্যবিত্ত লোকদের জুতা কেনার সামর্থ্য থাকার পরেও বা তাদের জুতা থাকার পরেও তারা চপ্পল পরবে। চপ্পল পরার দরুন তাদের নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বলে মনে হয়। আপনি যদি কোনো অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলেন সে আগে আপনার পায়ের দিকে তাকাবে এবং সে যদি লক্ষ্য করে আপনার পায়ে চপ্পল, তাহলে সে আপনাকে একটু অবজ্ঞার চোখেই দেখবেন।




























Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন