তেলাপিয়া

     —মোবায়দুল সাগর


ঢাকা বিমানবন্দর রেল স্টেশনের সামনে শাহনূর ও জিহানের জন্য অপেক্ষা করছি। শাহনূর আশুলিয়া থেকে আসছে ও জিহান স্টেশনের পাশেই আছে। একটি সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলাম। প্লাটফর্মের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। প্লাটফর্মের সাথে লাগোয়া প্রাচীরকে অঘোষিত সর্বজনীন মূত্রবিসর্জন কেন্দ্র বানানো হয়েছে। যাদের হালকা হওয়ার প্রয়োজন পড়ছে তারা ওখানে দাঁড়িয়ে অথবা বসে প্যান্টের জিপ, পাজামার ফিতা খুলে অথবা লুঙ্গির ভিতর থেকে প্রস্রাব নির্গমন করার যন্ত্রটি বাইরে বের করে জগতের অন্যতম শান্তি উপভোগ করছে। দুর্গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কিন্তু শেষ বিকেলের রোদ খুব আরামদায়ক অনুভব হওয়ায় ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। 

কয়েকজন ছিন্নমূল কিশোর একটি সিগারেট নিয়ে একে অপরের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছে লক্ষ্য করলাম। ওদের গায়ে রয়েছে ছেঁড়া ও মাত্রাতিরিক্ত নোংরা শার্ট ও প্যান্ট। দুই-তিনজন নগ্ন পায়ে এবং কয়েকজনের পায়ে পুরাতন কাপড়ের জুতা। হঠাৎ একজন বালক ও একজন যুবক—ওরাও ছিন্নমূল মানুষ—একটি প্লাস্টিকের পাত্রে ভাত ও তরকারি নিয়ে সর্বজনীন মূত্রবিসর্জন কেন্দ্রের পাশেই খেতে বসে গেল। একটি পাত্রে দুইজন খাবে, ওরা হাত দুটি ধৌত করেনি। অনতিদূর থেকে লক্ষ্য করলাম ওদের হাত দুটির তালু পিচের রাস্তার মত; যেমন কালো তেমনি ফাটা যেন যানবাহনের চাকার খাঁজের সাথে ওদের হাতের ফাটা খাঁজে ঘর্ষণে ঘর্ষণে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বালকটি যুবকের গালে খাবার তুলে দিচ্ছে। তেলাপিয়া মাছের একটি অংশের ভাগ নিয়ে দুজনের মাঝে আইল ঠেলাঠেলির মত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে দেখলাম। যুবকটি, বালককে কথায় পরাভূত করল। মাছের অংশটি ওর অধিকারে চলে গেল। কিন্তু সে মাছের অংশটি একাই গলাধঃকরণ না করে তার ভাইকে ফিরিয়ে দিল। (ওদের মধ্যে সম্পর্ক কি জানি না। তবে নিকট আত্মীয় হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।)


০২-০২-২০২৩
মিরপুর-১, ঢাকা। 



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন